গদ্য - নীলাদ্রি দেব


পোস্ট এডিটোরিয়াল, হাইফেন ও পোস্ট করোনা এরা 


। এক ।। 

দূরে কোথাও চাঁদ তারা ফুল ফুটে আছে। আমরা বাইনোকুলার নিয়ে দেখছি ওসব। ডিএসএলআর জুম করে দেখছি। খালি চোখে দেখার ভান করছি। আদৌ কি কিছু দেখার মতো দেখছি, জানি না। ওসব জানতে চাওয়া পাপ। কিন্তু সবসময় কি থেকেও না থাকা যায়?! না থেকেও থাকতে ভালোবাসি, আমি ও আমরা।

শুধু আমি আমি করে যাওয়া ঘোর বিপদের সম্ভাবনা। তাই মাস্ হয়ে থাকতে হবে। যদিও এভাবে থাকার যোগ্যতা সবার থাকে না। যাদের থাকে তারা নেতা হন। পরে বদলে যান অভিনেতায়। এরপরও বলবে অভিনয় চলছে না? অভিনয় দেখতে দেখতে ব্যাকস্টেজের কথা ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি থিওরির পাশে প্র্যাকটিক্যাল থাকে। 9:1 অনুপাতে। আর এই দশ শতাংশ নম্বর পেতে স্কুলে স্কুলে গোপন হাডুডু চলে। যদিও একে হাডুডু বলতে নেই। বলতে হয় পদ্ধতি। প্রক্রিয়াকরণ। যা হোক, আবোল তাবোল বলতে ইচ্ছে করলেই কি কবিতা ছেড়ে গদ্য লিখতে হবে! তেমন মাথাব্যথা নেই। আয়নার সামনে একা বকে গেলেই তো হত। তবু সাদা খাতা দেখলেই হাত চুলকোয়। না। আর যা চুলকোয়, তা নিয়ে ভাবা বারণ। এ সুযোগে মাথা চুলকোই, আসুন। বাকিটা পরে হবে। মানে আপনাকে চুলকোতেও হবে না। রাষ্ট্র চুলকে দেবে। সিস্টেম চুলকে দেবে।


। দুই ।। 

যে চাঁদ তারা ফুল পাখির কথা বলছিলাম, তার থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার পাশে প্রায় মৃত পথকুকুরের গল্প বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল। হ্যাঁ। এখন গল্পই হয়ে গেছে। কিন্তু গল্পে থেকে গল্পের কথা বলতে নেই। মানে, তা বলবার স্পর্ধা দেখাতে নেই। সুতরাং ডেটা ভরে স্ক্রল করে যাই। লভ রিয়েক্ট করি। লাইক দিই। ডিসলাইক অপশন স্পর্শ করার স্বাধীনতা থাকলেও শক্তি নেই। পেচ্ছাপ চাপিয়ে রাখতে পারি না আজকাল। সমাজ, পি.আর. বলেও তো কিছু কথা আছে। তাই ঘরে থাকি। ফুলটুসি চাদরের উপর নিজস্ব নামতা লিখি। আর ওই পথকুকুরের লেজের পাশে বসে পিঁপড়ে ডিম ফোটায়। মাছি ভনভন করতে থাকে গলার কাছে। ওখানে ঘা হয়ে আছে। চামড়ার নিচে এত কিছু... অজানা শহর। পরিপাটি মলাটের ভেতর এমন গা ঘিনঘিন ভেজা মণ্ড দেখলে, সময়কে ভেবে নিতে ইচ্ছে করে। তবু আমরা রূপ নিয়ে মেতে আছি। গ্ল্যামার একটি আনকাট শব্দ শুধু নয়। কাট কাট সত্যি। কিন্তু পথকুকুরটির পাশে কেউ নেই। ও হয়তো ভেবে যাচ্ছে শুশ্রূষা। ও হয়তো ভেবে যাচ্ছে বেঁচে থাকা সমীকরণের কথা। কিন্তু ও দেশ বলে কিছু জানে না। জানে না মাটি, রাষ্ট্রব্যবস্থা এক নয়। একমুঠো হলুদের গুঁড়ো ছিটিয়ে, ওই দেখো সেলফি তুলছে কে। সমাজসেবা একটি স্বাস্থ্যকর শব্দ। তাকে ঘিরে বারবার মায়ারস গড়িয়ে পড়ছে। কেউ দেখছে। কেউ পাশে দাঁড়াচ্ছে। কেউ খইয়ের পাশে উড়িয়ে দিচ্ছে ফুটেজ। ব্যতিক্রমকে উদাহরণ ভাবলে আপনি গুলিয়ে ফেলছেন মানেবই। শিক্ষাসত্রের পাশে অ্যাপ বিলোচ্ছে বহুজাতিক বাইস্কোপ। আপনি ঘটনার লাইভ নিয়ে মেতে থাকছেন। কিন্তু মাঠে নেমে ফড়িং ধরা শক্ত। ফড়িং-এর ডানায় ভর করে আছে শিশির। বিন্দু বিন্দু জলের ভারে নুয়ে আসছে ওর ডানা। গোটা দেহ. উড়তে না পারলেই ব্যাঙের আঠালো জিভ চেটে দেবে। চেটে দেবে টোটাল। তখন ব্যাঙ এক্কে ব্যাঙ। ব্যাঙ দুগুণে ব্যাঙ ব্যাঙ।


। তিন ।। 

ওদিকে কুয়াশা ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবটাই ঢাকা পড়ে যাবে। চুনোপুটি মাছের মাথাব্যথা ঢাকতে গাদাগুচ্ছের শাক ভাজা চলছে। শাক দিয়ে যা ঢাকা যাবে না, তার দিকে খেয়াল/ভ্রূক্ষেপ জমিয়ে রেখে, আর কী হবে? মানুষ ভীষণ জটিল বস্তু। একদিন থেকে এক সপ্তাহ মনে রাখে নিজের শ্বাসের পাশে জমে থাকা অন্য শ্বাসের শব্দ। এরপর... শোকের আয়ুর পাশে বসে ডিপি চেঞ্জ করে। আসলে, পাবলিক যা খায়, তাই খাওয়ানোর খেলা চলে বারোয়ারি কাঙাল ভোজনে। কুয়াশার ভেতর দিয়ে কাঙাল ভোজনের পথ। সোজা গিয়ে ডানে বামে মিশে জেব্রাক্রসিংয়ের লাল আলো। এমন মায়ার চাদরে ছায়া দেখা যায় না। শুধু পথ ও চপ্পলের ঘর্ষণের শব্দ। সেটাও পিছলে গেলে সবটাই মসৃণ পুরো। উলবলের মতো গড়িয়ে যায় অতিভূজের বাহু বরাবর। শুধু নিচে, আরও নিচে নেমে আসে সময়, পরিস্থিতি। যদিও উঠে আসা নিয়ে ব্রেকিং নিউজ নেই। সময়ের সামান্য চেষ্টাও নেই। উঠে কিছু হয় না। উঠে গেলে মই জড়িয়ে রাখার পদ্ধতি শিখে নিতে হয়। কেউ খসিয়ে দিলেই কমিউনিকেশন গ্যাপ। SOS. এমার্জেন্সি কল। নয়তো মিসডকল। তবে ওপারে কে রিসিভ করবেন, জানা নেই। যন্ত্রমানুষ বলে উঠতে পারে অফিসিয়ালি ভাদ্র এসেছে। শরৎ. কাশফুল নিয়ে স্টোরি হোক। কুকুরের সহজাত রতিক্রিয়া নিয়ে নয়। তাই আপাতত চাঁদ ফুল তারা। আপাতত নিজেকে নিয়ে ভাবুন। স্যানিটাইজ করুন হাত ও হাততালি। এপাশ, ওপাশ নিয়ে ভাবতে ভাবতে থার্ডফ্রন্ট নিয়ে কলাম পড়ুন। পোস্টএডিটোরিয়াল, পোস্ট করোনা এরার মাঝে হাইফেন গুঁজে দিন।


Comments