অনুবাদ কবিতা - নন্দিনী সেনগুপ্ত




গের্ট্রুড কোলমারের কবিতার অনুবাদ


মেঘে ঢাকা সময়



এইসব দিনে আমরা দ্রুত মৃত্যুর দিশা থেকে  
পিঠ ফিরিয়ে চলে আসি।    
এরকম একটা অলৌকিক কান্ড ঘটে যাবার পরে 
আমরা হাঁটু গেড়ে বসি।   
দূরে দুলে ওঠে ঈশ্বরের আসনের ধূসর আবরণ
এবং প্রবল দ্বিধায় উবে যায় আমাদের সব ভক্তি। 
প্রিয়জনের জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল তুলতাম আমরা
যে ছোট ছোট ফুলের বাগিচা থেকে, 
ফিরে আসার পথে দেখতে পাই
সেগুলি সব পদদলিত, শুষ্ক, ধূলিধূসর হয়ে পড়ে আছে।
ঐ ফুলগুলি দিয়ে যে ঈশ্বরের আসন সাজানো হয়েছিল,
সেই আসনও আজ উধাও। 


সকরুণ আর্তিতে উৎসারিত হয়েছিল 
আমাদের হৃদয়ের সংগীত 
সেই গানকে জড়িয়ে রেখেছিল গোধূলির গভীর ভীতি,
এখন সে সুর ক্লান্তভাবে দুলছে স্মৃতির পাতায়,  
কারণ তার সব আবেদন নিষ্ফল হয়ে গেছে
এক বিবর্ণ শূন্যতায়।
আমাদের ইচ্ছেগুলো নেচে উঠেছিল প্রবল উচ্ছ্বাসে,
যদিও সেই ইচ্ছের মুকুল থেকে 
ফুলভারে আনত কোনো শাখা নির্গত হয়নি। 
আমরা যে বাদামের বীজ বুনেছিলাম,     
সেই চারাগাছগুলি অবারিত আকাশে
দাঁড়িয়েছিল নত হয়ে।  


তারপরে এলো সেই সময়টা           
বন্দি জন্তুর মত,   
সংকীর্ণ খাঁচার পরিসরের মধ্যে 
ইতিউতি চেয়ে দেখছিল
তার আত্মাবিহীন চোখের আলস্যে, 
টলমল স্খলিতপদে দুয়ারে দাঁড়িয়েছিল
ভোঁতা একপেশে বিনয় নিয়ে।   
আমরা যেন যুগ যুগ ধরে বয়ে নিয়ে চলেছি
অসুস্থ ফুসফুসের অভিশাপ। 
আমাদের দিকে কিছু আশার টুকরো ছুঁড়ে দেয় 
এখনো সময়টা। তাই সেভাবে  
উপবাসের গুরুত্ব অনুভব করিনা, 
তবে এখন আর বাতাস ও সূর্য বিষয়ে 
আমরা কিচ্ছুটি জানিনা। 

   
(কোলমার রচিত ‘ট্রিয়্যুবে জাইট’ কবিতা অবলম্বনে লেখা) 

কবি পরিচিতিঃ  কোলমারের জন্ম মধ্যবিত্ত ইহুদী পরিবারে ১৮৯৪ সালে বার্লিনে। ১৯১৭ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই। ১৯২০ সালের পর থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে তার কবিতা। সমালোচকরা বলেছিলেন যে গের্ট্রুড সম্ভবত ইহুদীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জার্মান ভাষার লেখিকা। ত্রিশের দশকের শেষ দিক থেকে যখন নাৎসিবাহিনীর অত্যাচার জোরদার হতে থাকে ইহুদীদের উপর, গের্ট্রুডের বহু কবিতার বই নষ্ট করে ফেলা হয়। নিজের বাসস্থান ছেড়ে বারবার স্থানান্তরিত হতে হয় নাৎসিবাহিনীর হাত থেকে বাঁচবার জন্য। ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসের পরে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। কার্যকারণ, সূত্র সবই বলছে সম্ভবত, ঐ সময় তিনি আউসভিৎসে খুন হয়ে যান।



Comments