গল্প - অরবিন্দ ভট্টাচার্য




খুকু পিসিদের আজব বাড়ি




এ বাড়িতে বেড়াল কুকুর পাগল আর ভবঘুরেদের অবারিত দ্বার। কাউকে ফেরাতে পারে না খুকু পিসিরা। সবার জন্য কিছু না কিছু বরাদ্দ থাকতো সারাদিন। পাড়ার ভোটা কুকুর, পুষি বেড়াল, মাসি পাগলী, নেদু পাগলা কেউ অভুক্ত ফিরবে না ও বাড়ি থেকে। শুধু তাই নয়, পাড়ায় কাছে পিঠে কারো ঘরে খাবার না থাকলে, নানা পদ রান্না করে কাজের বউ লালপরিকে দিয়ে গোপনে ঐ বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতেন খুকু পিসি। 


রাজার শহরের মাঝখানে দুবিঘে জমির ওপর মান্ধাতা আমলের একটা বাড়ি। বাড়ির দুটো অংশ। ওরা বলতেন বার বাড়ি আর ভেতর বাড়ি। মালি চ্যাগার (বেড়া) দিয়ে ঘেরা মাঠের মধ্যে বার বাড়িতে ভাঙাচোরা হেলে পড়া একটা টিনের ঘর। সবাই বলতো কাছারি ঘর। সেই ঘরে থাকতেন খুকু পিসিদের দেশের বাড়ির পরিচিত এক বৃদ্ধ রিটায়ার্ড হেড মাষ্টার, নাম তার নিবারণ রায়। বড়রা বলতেন মিস্টার রায়। বিপত্নীক, ছেলেরা দেখতেন না, একাই থাকতেন ওই ভাঙা ঘরে। খুকু পিসিরা মামা বলে ডাকতেন। সারাদিন নাকে নস্যি দিতেন পাড়ার সার্বজনীন নিবারণ দাদু। প্রচুর ইংরেজি বই আর স্টেটসম্যান পড়তেন। ঘরে সাবেক আমলের চৌকির ওপর একটা ঢাউস কাঠের সিন্দুক। সেটাই ছিল দাদুর খাজানা। ভাঙা ঘরে সাপখোপ থেকে বাঁচতে দুবেলায় শাল কাঠের খুঁটির গোড়ায় তুলি দিয়ে কার্বলিক এসিড লেপে দিতেন নিবারণ দাদু। কাছারি ঘরের দরজার বাইরে দু দিকে পায়া ভাঙা ইটের গ্যাটিস দেওয়া দুটো কাঠের বেঞ্চ। সেখানেই পালা করে আড্ডা জমতো পাড়ার যুবক আর বয়স্কদের। পাড়ার বখাটে ছেলেরা যেমন যোগ দিত; তেমনি আইনজীবি, শিক্ষক, মহুরী সরকারি কর্মচারী সবার সমাবেশ ঘটতো ওই আড্ডায়। তবে সময় নির্ঘণ্ট বাঁধা ছিল সবার জন্য। বিকেলের আড্ডায় বয়স্কদের জন্য ফ্রি চা আসতো ভেতর বাড়ি থেকে। মাঝে মধ্যে বিজয় কুরির মিষ্টির দোকান থেকে ঝুড়ি ভাজা আর বুঁদিয়া এনে ছেলে ছোকরাদের খাওয়াতেন নিবারণ দাদু। আড্ডায় তর্ক আর ঝগড়া মেটাতে শেষ আসরে অবতীর্ণ হতেন দাদু। দাদুর কথাই ছিল চুড়ান্ত, শিরধার্য। দাদুর মতে প্রমথেশ বড়ুয়া আর কানন দেবী যেমন ছিলেন বাংলা ছবির সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ তারকা। তেমনি তার মতে, মহারাজার ফুটবল দলের বাবুলাল গুরুংই ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম গোল রক্ষক, লেভইয়াসিন বা গিলমার ওর কাছেই কিছুই না! এসব নিয়ে দাদুকে ঘাটানোর যোগ্যতা বা সাহস সে সময় কারো ছিল না।

  
ভেতর বাড়িতে চার ভিটেতে অনেক ঘর। শোয়ার ঘর, রান্না ঘর, ভাঁড়ার ঘর আর হবিষ্য ঘর। কাঁচা মেঝে বাঁশের বেড়া ওপরে ডেউটিন। দক্ষিণ পূর্ব কোনায় মস্ত এক ইঁদারা। বাঁশের নিচে ইঁট বাঁধা কপিকলের মাথায় দড়ি বেঁধে লোহার বালতি দিয়ে ওই কুয়ো থেকে জল তুলে রান্না খাওয়া স্নানধ্যান সব কিছুই চলত বাড়ির সবার। বছরে এক আধ বার চুন ছিটিযে শোধন করা হত ওই কুয়োর জল। গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আম জাম কাঁঠাল আর সীমানার ধার ঘেষে অজস্র শুপুরী গাছ। আম জামের মরশুমে পাড়ার ছেলেদের ঢিলের অত্যাচারে প্রাণ অতিষ্ট হয়ে উঠতো ওই বাড়ির শান্তি প্রিয় মানুষ গুলোর। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকেও বিদ্যুত্‍ ছিল ওদের অধরা। সন্ধ্যের পর ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত কেরোসিন তেলের লন্ঠন আর পেতলের কূপি। ওরা বলতেন ল্যাম্ফো! বাকি বাড়িটা গভীর অন্ধকারে ডুবে যেত। প্রতি বর্ষায় বৃষ্টির জলে ডুবে যেত গোটা বাড়ির উঠোন। মাঝে মধ্যে অতি বর্ষণে শোয়ার ঘরেও জল ঢুকে যেত। যদিও বানের জল ইটের ওপর ইঁট দিয়ে উঁচু করা চৌকি ছুঁতে পারতো না। তবে ধুতি শাড়ি গুটিয়ে জলে টই টম্বুর উঠোন পেরিয়ে সাপ ব্যাঙ এড়িয়ে এ ঘর ও ঘর যাতায়াত করতে হতো ওই কটা দিন। তাতে ওদের কোন বিরক্তি ছিল না। আসলে এটা ছিল ওদের মামাদের কাছারি বাড়ি। মামারা এখানে কেউ থাকতেন না। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়াতে খুকু পিসির বিধবা মা শৈলবালা সন্তানদের নিয়ে মামাদের বাসায় এসে উঠেছিলেন। বসবাস করলেও সংস্কার করার কোন অধিকার ছিল না ওদের।

       
ভেতর বাড়িতে পূর্বমুখী শোয়ার ঘরে মা শৈলবালার সাথে থাকতেন খুকু পিসি। দুই দাদা চাঁদু কাকু, শিবু কাকু আর ছোট ভাই কালী কাকু থাকতেন অন্য ঘরে। শিবু কাকু ছিলেন শিক্ষা দফতরের হেড ক্লার্ক। সব সময় ধোপদুরস্ত ধুতি শার্ট পড়তেন। গুরু গম্ভীর চেহারা।  কম কথা বলতেন। কিন্তু হৃদয়টা ছিল বড় উদার। রবিবারেও অফিস যেতেন। বাস্তুহারা বেকার যুবকদের খুঁজে খুঁজে শিক্ষকের চাকরি যোগাড় করে দিতেন তিনি। আর রাত বিরেতে মরা পোড়াতে ছুটে যেতেন শ্মশানে। আসলে যেচে পরোপকার করা মানুষ ছিলেন শিবু কাকু। চাঁদু কাকুও ভাল চাকরি করতেন। বন্ধু বান্ধব নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতেন। গোপনে সাহায্য করতেন অনেক মানুষজন কে। পড়ার সবাই দরখাস্ত লেখাতে আসতেন চাঁদু কাকুর কাছে। “ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে” পাজেল মেলাতেন। আর ছোটদের মজা করে ধাঁধা ধরতেন, “বল, chalk – চল্কা না কল্কা”?

  
ওরা সবাই ছিলেন প্রচণ্ড মাতৃভক্ত। মায়ের কথাই শেষ কথা। ভাইরা কেউ বিয়ে করেন নি। অথচ শিবু কাকু আর চাঁদু কাকু দুজনেই ছিলেন সুপুরুষ এবং ভাল মাইনের সরকারি চাকুরে। পাড়ার সবাই আঙুল তুলতেন ওদের মা শৈলবালার দিকে। কেউ বলতেন, “ছেলেরা পর হয়ে যাবে সেই আশঙ্কায়, আবার কেউ বলতেন, মাসিমার ঘি দুধ ছানাতে টান পড়ে যাবে, - তাই  উনি ছেলেদের বিয়েই দিলেন না!” কালী কাকুর বিয়ের কোন প্রশ্নই ওঠে নি কোনদিন। ক্লাস সিক্স এ তিন বার ফেল করে স্কুল ছেড়ে দেওয়া কালী কাকু ছিল ওদের হাউসহোল্ড মিনিস্টার! হিসেব নিকেশে পাকা। বাড়ির সবার ফায় ফরমাস খাটা, বাজার হাট, রেশন, কয়লা, মুদির দোকান, ধোপাবাড়ি সব কিছু সামলেও কালী কাকু গোটা শহর চষে বেড়াতেন অবসর সময়ে। কোন পাড়ায় মারামারি হল, কে মার খেলো- কে দিলো, কার ছেলে কার মেয়েকে নিয়ে পালালো, প্রেমে বিফল হয়ে কে ট্রেনের নিচে কাটা পড়লো, কার ছেলে সিগারেটে টান দিয়ে সুনু সাহার মুদির দোকান থেকে মৌরি চিবাতে চিবাতে আড্ডা মারতে চলে গেল, কোন পাড়ায় কে মারা গেল, সারাদিন ধরে সেই সব ব্রেকিং নিউজ বয়ে আনতেন কালী কাকু। নিজের বিদ্যা ক্লাস সিক্সএ চুকে গেলেও, প্রতিবছর আন্যুয়াল পরীক্ষার রেজাল্টের সময় কালীকাকু শহরের স্কুল গুলো ঘুরে ঘুরে কার ছেলে পাস করলো কার মেয়ে ফেল করলো সেইসব খবর সবার আগে পৌছে দিতেন পাড়ায়। কোন কাগজেই কোন দিন ছাপা হতো না এই সব অজানা খবর! এ জন্য পাড়ায় বেশ গুরুত্ব পেতেন কালী কাকু। তবে বখাটে ছেলেদের তিনি ছিলেন চক্ষুশূল। দুর থেকে গালমন্দ করে পালিয়ে যেত ওরা।

   
খুকু পিসি ছিলেন পরমা সুন্দরি। দুধে আলতায় গোলা গায়ের রঙ। সোনালী ফ্রেমের চশমায় আরো সুন্দরি দেখাতো তাঁকে। সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল অনেক বছর আগে। বর রেলে মোটা মাইনের ভাল চাকরি করতেন। বর্ধমানে রেল কোয়াটারে থাকতেন। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। বিয়ের পর সামান্য মনমালিন্যে রাগ করে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন খুকু পিসি। অনুতপ্ত স্বামী বহুবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না খুকু পিসির। মা শৈলবালা পাবনার জমিদার বাড়ির মেয়ে। জমিদারী অহংকার আর স্বাভিমান তাঁকে ভাঙতে শিখিয়েছে মচকাতে শেখায় নি। বলা বাহুল্য মায়ের অনুমতি মেলেনি। মাতৃভক্ত ছেলেরাও মায়ের কথা নত মস্তকে মেনে নিয়েছে। মা বলে দিয়েছিলেন, “যেতে পারো কিন্তু আর এ বাড়ি মুখো হতে পারবে না আর কোনদিন”। নিভৃতে চোখের জল ফেলেই অসহায় খুকু পিসিকে মেনে নিতে হয়েছিল সেই অমোঘ মাতৃ আজ্ঞা। বাপের বাড়ি ফিরে আসার পর প্রথমিক শিক্ষিকার চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। খুকু পিসির একটা পোশাকী নাম ছিল। সেই নামের পেছনে স্বামীর পদবীটাই ব্যবহার করতেন স্কুলের খাতায়। সকালে তিন চার ঘন্টার স্কুল। স্কুল থেকে ফিরেই ঢুকে যেতেন হেসেলে। রায় পরিবার বরাবরই ছিল ভোজন রসিক। ডোবা তেলে রান্না ছাড়া কেউ ভাত মুখে তুলবে না। প্রতিদিন পালা করে মাছ মাংস ডিম চাই। সে জন্য বিকেলে অনেকটা সময় কালীকাকুর বাজারেই কেটে যেত। কয়লার উনুনে পাঁচ ছয় পদ রান্না করে কাঁসার থালা বাটিতে পরিপাটী করে সাজিয়ে সবার মুখে দু বেলা তুলে দিতেন খুকু পিসি। রবিবার গাছের শুকনো ডালপাতা মধ্য উঠোনে জড় করে বিরাট লোহার কড়াইতে সোডা দিয়ে ভারী কাপড় চোপড় সেদ্ধ হতো। কাজের বউ লালপরিকে দিয়ে সেই কাপড় কেচে ধুয়ে ঘরে তুলে নিতেন খুকু পিসি। কাজ শেষে নির্জন দুপুরে কুয়ো তলায় দরমার বেড়ার আড়ালে স্নান সেরে নিতেন। এবার খেয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে লম্বা ঘন কালো চুল নিচে ছড়িয়ে দিয়ে, নব কল্লোল আর উল্টোরথ পড়ে অলস দুপুর কাটিয়ে দিতেন আমাদের খুকু পিসি। বিকেলে দড়ি দিয়ে বাঁধা কেরোসিন কাঠের টেবিলের ওপরে ফ্রেম থেকে বেরিয়ে আসা পারদ ওঠা প্রাগঐতিহাসিক এক ধূসর আয়নায় মুখ দেখতেন সুন্দরী খুকু পিসি। মুখে আফগান স্নো আর হিমালয়ান ব্রুকে পাউডার মেখে খোঁপা তুলে বাঁধতেন। লুকিয়ে সিঁথিতে ছোট্ট করে সিঁদুর দিতেন। শাখা লোহা খুলে ফেলার জন্য চাপ এসেছে অনেক। কিন্তু কিছুতেই মেনে নেন নি এ অন্যায় অনুশাসন।

 
পুজোর আগে বাড়ির সবার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনতে দু একদিন পাশের বাড়ির ছন্দা বৌদির সাথে পাড়ার মোড়ে দয়াময়ী বস্ত্রালয় অথবা চুনি বাবুর কাপড়ের দোকানে যেতেন খুকু পিসি। এই আউটিংটাই বোধহয় ছিল ওর সারা বছরের একমাত্র বিনোদন!

 
গোটা ভেতর বাড়িটাই বাঁশের উচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। এরই মাঝে কোন কোন দিন খুকু পিসিকে দেখার সুপ্ত বাসনায় গাছ থেকে আম গুলঞ্চ পাড়ার অছিলায় মাথায় মস্ত টাক নিয়ে ভেতর বাড়িতে হাজির হতেন কানে কালা পাড়ার জীবন কবিরাজ। দুপুর বেলায় লোকজন না থাকলেই আলাপ পারতেন খুকু পিসির সাথে। বিচক্ষণ খুকু পিসি চা খাইয়ে পরিপাটী করে বিদায় দিতেন শ্রদ্ধেয় জীবনদাকে!

 
খুকু পিসির বিয়েতে পাওয়া একটা চামড়ার সুটকেস ছিল। গা তালা লাগানো সেই সুটকেসের পকেটে সযত্নে রাখা ছিল সৌম্য দর্শন এক  পুরুষের সাদা কালো হাফ সাইজ একটা ছবি। ধুতি পাঞ্জাবি সোনার বোতাম আর গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা পড়া ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সাবেক বাঙালি চেহারার ওই মানুষটি ছিলেন খুকু পিসির বর। একা থাকলে মাঝে মধ্যে লুকিয়ে চুড়িয়ে দেখতেন ছবিটা। চোখ দিয়ে হয়তো দু এক ফোটা জলও গড়িয়ে পড়তো সেই সময়! মাটির মেঝেতে পড়ে দু:খের সেই জল শুকিয়েও যেত সবার অজান্তে নিমেষেই! আসলে শৈলবালার জমিদারী ইগোর মাশুল গুনতে হয়েছিল নিরাপরাধ খুকু পিসিকে সারা জীবন ধরে। 

   
মরিয়া স্বামী একবার খুকু পিসিকে নিয়ে যেতে বর্ধমান থেকে শ্বশুর বাড়ি আসতে চাইলে, তাঁকে টাইট দিতে গুণ্ডা ভাড়া করার পরিকল্পনাও চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। অগত্যা খুকু পিসি গোপনে চিঠি লিখে স্বামীকে আসতে নিষেধ করে দিয়ে ছিলেন। অপমানিত স্বামীর কাছে আর তাঁর ফিরে যাওয়া হয় নি কোন দিন। অগত্যা মাতৃ গরিমার কাছে পরাজিত খুকু পিসি চোখের জল লুকিয়ে নিজের গন্ডি নিজেই কেটে নিয়েছিলেন। বাড়ির অন্য সবাই জানলেও, স্বামীর মৃত্যু সংবাদ বয়ে আনা টেলিগ্রামটিও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর হাতে এসে পৌঁছায় নি। তাই শাখা সিঁদুর নিয়ে অনিচ্ছা নির্বাসনে বাপের বাড়িতে আমৃত্যু এয়োতির জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন অভাগী খুকু পিসি!


Comments

  1. দাদা, খুব সুন্দর হয়েছে। পুরোনো যৌথ পরিবারের একটা দৃশ্য।

    ReplyDelete

Post a Comment