সম্পাদকীয়

 


"শ্রাবণ মেঘের 

নিবিড় সজল কাজল ছায়া

দিগ দিগন্তে ঘনায় মায়া.."


শ্রাবণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বর্ষা এই তিনটি বিষয় কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। যদিও রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর কাছে সবসময়ের জন্য একটা আকাশ। বাঙালীর জীবনে প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বিগত শতাব্দী, যে শতাব্দী আমরা অতিক্রম করে এসেছি, সেই শতাব্দীতে বাঙালী অনেক কিছু দেখেছে,  দু- দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, মন্বন্তর দেখেছে, দুর্ভিক্ষ দেখেছে, দেশভাগ দেখেছে। বাঙালী হারিয়েছেও অনেক কিছু। কিন্তু এই শতক বাঙালীকে "রবীন্দ্রনাথ" দিয়েছে। যিনি  সমস্ত হতাশার উর্ধ্বে উঠে, সমস্ত অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন- " নিবিঢ় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা/ মন রে মোর পাথারে হোস নে দিশেহারা"।  আজকে এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মানুষ যে সঙ্কটের সম্মুখীন, তা মানুষের কল্পনার অতীত। এরকম একটি পরিস্থিতিতে কবিগুরুর এই বাণী মনে বিপুল সাহস সঞ্চয় করে। "ঘরে বাইরে" উপন্যাসে নিখিল-সন্দীপ এর একটি কথপোকথনে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- "মানুষ মরনান্তক দুঃখ পাবে, কিন্তু মানুষ কোনদিন মরবে না।" তাঁর এই কথা চিরন্তন সত্য। মানুষের সেভাবে মৃত্যু নেই। যত বড় সঙ্কট আসুক আমরা জিতবই। শুধু দরকার কবিগুরু যে মানবধর্মের কথা বলে গিয়েছেন তা অনুসরণ করা। আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি দরকার মানুষকে সবার উর্ধ্বে রেখে, অন্তর দিয়ে মানুষের কথা ভাবা- "সবচেয়ে দুর্গম যে মানুষ, আপন অন্তরালে/ তার কোন পরিমাপ নেই বাহিরের দেশ ও কালে/ সে অন্তরময়, অন্তর মিলালে তবে তার অন্তরের পরিচয়"।


এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কথালহরীর আত্মপ্রকাশ। আজ সে তৃতীয় মাসে পদার্পণ করল। এরই মধ্যে কথালহরী তার নিজস্বতা তৈরী করে নিয়েছে, পৌঁছে গেছে বহু পাঠকের হৃদয়ে। আজ  এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে "কথালহরী" তার তৃতীয় সংখ্যায় সকল মানুষকে,  শিক্ষা- সাহিত্য- সংস্কৃতি-চিকিৎসা চিন্তায় ও চিত্তের  কেন্দ্রবিন্দুতে "মানুষ" কে স্থান দেবার কথা বলে। বিশেষ করে সেইসব মানুষ, যারা মানুষের জন্য যুদ্ধ করে, যারা সত্যিকারের যোদ্ধা....

      "বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার 

        তারই পরে ভর দিয়ে 

        চলিতেছে সমস্ত সংসার"

যাঁরা কথালহরী কে ভালবেসেছেন, পাশে থেকেছেন তাঁদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। যাদের কলমে কথালহরী সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠছে তাঁদের প্রতি চির কৃতজ্ঞতা।



Comments