প্রবন্ধ - ভগীরথ দাস




সুন্দরের উপাসনা 



যা আগে কেউ বলেননি, যিনি বললেন এমন কথা তিনি কবি। এর থেকে ভালো করে বলা মুশকিল।  


সবাই জানেন কবি প্রকৃত প্রস্তাবে কথক। ব্যাখ্যাকর্তা। সমাজে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাখ্যা করেই জ্ঞান দান করেন। ব্যাখ্যা করা মানেই জ্ঞান দান করা। কবি ও শিক্ষক সমাজের এই ঐক্য সূত্রে পার্থক্য অল্পই, কবির ব্যাখ্যায় থাকেন আপামর।


ভেবে দেখলে সবার ভেতরে কোন না কোন প্রকাশের তোড়জোড় থাকে। প্রয়োজনের কারণেই চারদিকে এত আয়োজন। কবিরা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন নতুন কিছু শোনান বলেই।


কবি ব্যাপারটা এখানে এসে গোলমেলে ঠেকে। এই যে এত এত কবি, জীবনানন্দ ভাষ্যের কাছে আমাদের দ্বারস্থ হতে হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত স্থিতু করি সহজ করে, এই প্রকৃতি রাজ্য সৌন্দর্যময়। কবি যখন দেখেন তখন সুন্দরকে দেখতে পান; আমরা সৌন্দর্যে আটকে থাকি। শিক্ষক থেকে আমরা সবাই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা করি, কবি এসে সুন্দরকে দেখিয়ে দেন। পার্থক্য এটুকু।


সুন্দর সম্পর্কে প্রাজ্ঞজনের সংজ্ঞা, শ্রম আর মনন চিহ্নিত রূপ। আমাদের কাছে বোঝা কঠিন হয়। উদাহরণ চেয়ে বসি। এক্ষেত্রে কবিবৃত্তে গেলে সহজ হবে। একের পর এক কবি মহাভারতের  মূল্যবান বাণী বিতরণ করলেন। বাণীর ভেতরকার কায়িক কুশলতা অতীব মূল্যবান। আমরা মূল্যবানকেই প্রশংসা করি। পথের পাঁচালীর স্রষ্টা কবি। ওখানে কবিত্ব-শক্তি সম্পন্ন বিভূতিভূষণের অধ্যবসায় নিয়ে চিন্তিত থাকি না। তাই কবি হতেও পারি না। কথার বিস্তার ঘটিয়ে কবি সাজি, যেমনটা নাটকের কুশীলব। নাটককার তখনো সুন্দর বিলোতে থাকেন। কুশীলবের অহংকার সৌন্দর্য সৃষ্টিতে, সুন্দরের সঙ্গে সূক্ষ্মতা বোঝা তাদের কঠিন হয়। বোধকরি ধারও ধারেন না।


কবি ছাড়া উত্তর কারো জানা নেই, কেন লিখি এই  প্রশ্নের। আমাদের অনেকটা জানা থাকা সত্বেও চিন্তা ধারা প্রকাশের জন্য অন্যের অভিজ্ঞতার মূল্য দিতে থাকি। কবি কী উত্তর করেন, অপেক্ষা করি। কুচবিহারের কবি পরেশ সোমের নাম কজন জানেন? তিনি, কিংবা একেবারে নবীন প্রজন্মের পীযুষ রায়ের কবিতা পড়ে  একটা উপলব্ধির জন্ম হয়। তাদের আরও লেখা পড়ার ইচ্ছে জাগে। এটাই সূক্ষ্মতা। কবি রঞ্জন রায় দৃশ্যমান জগতের সাথে কবিতাকে সমান ভাবে কাজে লাগাতে ব্যস্ত থাকছেন। কবি যতীন বর্মা  , কবি কমলেশ সরকার অকপট সারল্যে কবিতাকে অধ্যয়নের বিষয় করে তুলছেন; এসবই কবির উত্তর। কারো নাম করে এগুতে ভয় হয়, অনেকেই ভালো লিখছেন। কবিসত্ত্বা তারা অধিগত করেছেন। কবিয়াল আজ নেই, অভিজ্ঞতা বলে তারা কবিস্রষ্টা কাব্য সৃষ্টির শোনেন দেখেন অনুধাবন করেন, এক সময় নিজেদের কবি হওয়ার বাসনা জেগে ওঠে।


কবিতার উপাসনা কবির নিজস্বতা। নতুন সৃষ্টি রূপকের অন্তরাল। বক্তা ও শ্রোতা একটা সংহত ব্যাপার। বুদ্ধি সেখানে আনন্দ জোগায়। আত্মার মহত্তর রূপ পরিগ্রহ করে করে বলেই সকলেই কবিতার উপাসনা চেষ্টা করি।




Comments