পিতৃত্ব
রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে মহুয়া বোস। রাস্তার এপারে ঋষি আর ঋষির স্কুল। ঋষি ছুটির পর কিছু একটা কিনছে ফুটপাতের ধারে দোকান থেকে। কিনে খেতে খেতে রাস্তা পার হয়ে মায়ের কাছে পৌঁছাল। তারপর মায়ের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। মহুয়া বোস প্রত্যেকদিন এই সময়টাতে অফিসে থাকেন। বাড়ির কাজের লোক নিয়ে যায় ঋষিকে। আজ ব্যক্তিগত কাজে অফিস ছুটি নিয়েছিলেন। ফেরার পথে নিজেই নিতে এসেছেন ঋষিকে। অনেক ছেলে মেয়েদের নিতে এসেছে তাদের বাবা। ঋষির তেমন কোনো অভাব না থাকলেও এই ভাগ্যটা নেই। মহুয়া বোস বছর দুয়েক আগেই ঋষির বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছেন। অথচ একটা সময় সবকিছু কিন্তু ভালই যাচ্ছিল। ঋষির বাবা অভয় মিত্র তখন বেশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কিন্তু ব্যবসায় একটা বড় রিস্ক নিতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি। সব শেষ হলো। অতি বাস্তববাদী আর আবেগহীন স্ত্রীর কাছেও তার গুরুত্ব কমে গেল দ্রুত। অসহায় ফ্রাসট্রেটেড একজন মানুষকে দিনে দিনে বোঝা মনে হতে লাগল মহুয়ার। তারপরই ডিভোর্স। আবেগ তাড়িত না হলেও একটু খারাপ লাগছিলোই বাকি বাচ্চাদের বাবাদের দেখে। কতটা ভালোবাসে তারা নিজের শিশুকে। পাশাপাশি অতীতের কিছু ভালো কাটানো সময়ের কথাও আবছাভাবে মনে চলে আসছিল। ভাবনা গাঢ় হবার আগেই বিরক্ত বোধ হচ্ছিল। এমন একটা লোকের হাত ধরেছেন তিনি, যার এই শিশুটার প্রতি টানটুকুও নেই। দু'বছর ধরে একবারও এসে ঋষির সঙ্গে দেখা করতে চায়নি মানুষটা। কিছুটা পথ হাঁটা আর ঋষির বিভিন্ন বায়না শুনতে শুনতে কথাগুলো মন থেকে সরিয়েও দিলেন তিনি। শুধু এটা অনুমানও করতে পারলেন না যে বড় চুল, মুখভর্তি কাঁচা-পাকা দাড়ি আর শার্টের পকেট ছেঁড়া ফুটপাতের দোকানদারটাই ঋষির বাবা অভয় মিত্র। রোজ ঋষিকে শুধু একবার-দুবার দেখার জন্য অসহায়ের মতো এই পেশাটাই বেছে নিয়েছেন।
Comments
Post a Comment