অনুনাটক - অর্পিতা দাশগুপ্ত




আজি এ বসন্তে

 

'প্রহরশেষের রাঙা আলোয় সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলেম
আমার সর্বনাশ।' 


পলাশ। পলাশের নামটা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। তার নাম, চাহনি, তার হাসি, তার প্রেম....তাকে ভোলবার জো-ই নেই যে আমার! আসলে নিজের দিকে তাকালেই তো.....। নাহ্ বরং গোড়া থেকেই শুরু করা যাক।


'আমি তখন নবম শ্রেণি
আমি তখন শাড়ি'
শরীর তখন সদ্য পাপড়ি মেলা শুরু করেছে। লম্বা ছিপছিপে গড়ন, গমরঙা ত্বক, ধারালো মুখ, দীঘল চোখ, একঢাল কালো চুল.....সুশ্রী নয় লোকে আমায় সুন্দরীই বলতো।
না সুলেখাদের বাড়ি নয়....পলাশকে প্রথম দেখেছিলাম পাড়ার দুর্গাপুজোয়, অষ্টমীর অঞ্জলি দেবার সময়। সদ্য সেই যুবকের মুগ্ধ দৃষ্টি চিনে নিতে অসুবিধে হয়নি সেই সদ্য পঞ্চদশীর। আর তারপর থেকেই যাওয়া-আসার পথে স্কুলের গেটে  প্রায়ই পলাশকে দেখতে পেতাম  ..... সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করে আমার জন্য।


আমার দৃষ্টিতেও কি ছিল কটাক্ষ কিংবা ঠোঁটের হাসিতে প্রশ্রয়? সরস্বতী পুজোর দিন। শাড়ি পরে, সেজেগুজে কোচিংয়ে যাবার জন্য বেড়িয়েছি .... পথ আটকালো সে। আমি যে তার ঘুম কেড়েছি, ভুলিয়েছি তার নাওয়া-খাওয়া ..... এমনকি লেখাপড়াও ..... আমায় ছাড়া তার জীবন নাকি একেবারেই অচল!!! এমনই কত স্বীকারোক্তি ....  কত আবেদন-নিবেদন করেছিল সে। কিন্তু আমার চোখে তখন বিমানবালিকার উড়ানে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন!!!  মাটির পৃথিবীর পলাশের দিকে তাকাবার অবকাশ কই? আমার প্রত্যাখ্যানে পলাশের আহত দৃষ্টি, ব্যথায় নীল হয়ে যাওয়া মুখ পিছনে ফেলে গর্বিণী রাজহংসীর মতো এগিয়ে যাই আমি।


অবশেষে এলো সেই দিন।  বসন্তোৎসব। আমাদের ছোট্ট মফস্বল শহরের পথে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে রঙের বন্যা, ফাগের ফোয়ারা। 'হোলি হ্যায়' ..... আমিও সামিল সেই দলে। হঠাৎ সামনে দেখি .... পলাশ!!! আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, হাতদুটো পিছনে লুকোনো। আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মুখে হঠাৎ ছিটিয়ে দিলো- নাহ্ এক মুঠো আবীর নয় ..... এক আঁজলা অ্যাসিড ..... আহ্হ্হ্হ্।


তারপর কেটে গেছে দশ দশটা বছর। মেঘবালিকা হওয়ার স্বপ্ন এক রঙিন বুদ্বুদের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে কবেই!!! ৩৭টা অপারেশন আর দীর্ঘ আইনি যুদ্ধ পেরিয়েছি এর মধ্যে। এই লড়াইয়ে সঙ্গী ছিলেন যিনি সেই প্লাস্টিক সার্জেন ডক্টর আমন এই বসন্তে আমার জীবনসঙ্গীও হতে চলেছেন। আপনারা আমাদের আশীর্বাদ  করছেন তো?


Comments

  1. খুবই ভালো লাগলো অণুগল্পটি পড়ে, একটি জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যার দিকে আলোকপাত করা হয়েছে। আরও এমনি গল্প চাই।

    ReplyDelete

Post a Comment