প্রবন্ধ - রঞ্জন চক্রবর্ত্তী



জাদুবাস্তবতা এবং সাহিত্য 


“All manner of thing shall be well

When the tongue of flame are in-folded into the crowned knot of fire

And the fire and the rose are one.” 

        -T. S. Eliot : Little Gidding


জাদুবাস্তবতা বা ‘Magic realism’ সাহিত্য জগতে সুপরিচিত ও বহুচর্চিত একটি বিষয়। জাদুবাস্তবতা কেবল ফ্যান্টাসি নয়, মিথ নয় বা রূপকথাও নয়। আসলে এটি আধুনিক সাহিত্যের এক বিশেষ রীতি যেখানে বাস্তব এবং অবাস্তবের সীমারেখা মুছে যায়, যাকে সমালোচক Angel Flores বলেন “an amalgamation of realism and fantasy”. Oxford English Dictionary বলছে জাদুবাস্তবতা হল – “Any artistic or literary style in which realistic techniques such as naturalistic detail, narrative, etc. are similarly combined with surreal or dreamlike element.” এই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করার আগে দেখে নেওয়া দরকার জাদু বলতে কী বোঝায়।


বিখ্যাত আমেরিকান লেখিকা-গবেষিকা Maria Leach বলেন জাদু হল, “the art of compulsion of the supernatural; also the art of controlling nature by supernatural means.” এই ব্যাখ্যা মেনে নিলে বলতে হয় জাদু হল সেই প্রক্রিয়া যার সাহায্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বা ঘটনাবলীকে অতিপ্রাকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর একটু বিস্তৃত অর্থে জাদু হল সেই উপায় যার মাধ্যমে নানারকম দৈব-দুর্বিপাককে প্রতিহত করা যায়। জাদুবিদ্যা হল অলৌকিক উপায়ে কার্যসিদ্ধি করার করার প্রাচীন পদ্ধতি।  জাদুমন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বা ভেল্কি দেখিয়ে অসাধ্যসাধন করার প্রচেষ্টাও এর মধ্যে পড়বে। এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। ধর্মের মধ্যেও তো দৈবশক্তির সাহায্যে বা অলৌকিক উপায়ে অশুভকে দূর করার সাম্ভাব্য উপায় বর্ণিত হয়েছে, তাহলে কী এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে। এক্ষেত্রে বলা যায় অল্পশিক্ষিত বা অনুন্নত সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায়শই ধর্ম ও জাদুর মধ্যে তফাৎ করে না।


জাদুর মধ্যে দুটি বিশেষ দিকের প্রভাব দেখা যায় – প্রথমত আদিম সমাজের ‘animism’ এবং দ্বিতীয়ত রহস্যের আবরণে আবৃত বিভিন্ন ক্রিয়াচার ও তন্ত্রমন্ত্রের প্রভাব। James George Frazer জাদু ও ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে বিভিন্ন সাদৃশ্য নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে জাদুকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন – একটি ভাগ সমপর্যায়ের, আর অন্যটি ছোঁয়াচে প্রক্রিয়ার। তবে সাধারণ বিচারে জাদুর দুটি প্রকারভেদ রয়েছে – সাদা জাদু (White magic) এবং কালো জাদু (Black magic)। সাদা জাদু কল্যাণকর এবং পার্থিব সমস্যা সমাধানের সহায়ক। অন্যদিকে কালো জাদু অমঙ্গলকর এবং ক্ষতিকর।


‘Magic realism’ নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভে ‘Realism’ নিয়ে সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা যাক। ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্পী Gustave Courbet-এর হাত ধরে শিল্পে ‘Realism’ নামক আন্দোলনটির সূচনা হয়। তাঁর পূর্ববর্তীকালের রোমান্টিক পর্যায়ের শিল্পীদের কাজের পর্যালোচনায় দেখা যায় সামগ্রিক ভাবে জীবনকে রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গী সহকারে দেখা হত ও সেভাবেই বর্ণনা করা হত। তখন শিল্পীদের লক্ষ্য ছিল ল্যাণ্ডস্কেপকে আরো সুন্দর করে আঁকা যাতে তা প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় এবং কোন বস্তু বা শরীরকে নিখুঁত করে আঁকা যাতে তা একেবারে মূলানুগ হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে প্রায়ই আবেগেরও অতিশায়ন ঘটতে দেখা যায়। ১৮৪৮ সলে ফরাসী বিপ্লবের পর শিল্পীরা জীবনকে রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখার পরিবর্তে বাস্তবতার যথাযথ উপস্থাপনকে বেশী করে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করলেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে realism- এর ধারণা দ্বারা প্রভাবিত লেখকগণ সমসাময়িক জীবনকে যেভাবে বাস্তবের আলোকে দেখেছেন সেভাবেই রচনায় উপস্থাপিত করেছেন। এর উদাহরণ হিসেবে George Eliot রচিত ‘Middlemarch’ উপন্যাসটির কথা বলব।


সাহিত্যে বাস্তবতা ও রোমান্টিকতার দ্বন্দ্ব বহুকাল থেকেই চলে আসছে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে পরাবাস্তবতার (‘Surrealism’) ধারণা আসার পর এই দ্বন্দ্বের তীব্রতা অনেকটা চাপা পড়ে যায়। যেভাবে ‘Romanticism’ বিরোধী আন্দোলন থেকে ‘Realism’- এর সূচনা হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই পরবর্তীকালে Realism- এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে Magical Realism- এর উদ্ভব হয়। কিন্তু সেটা সরাসরি হয়নি, এর মাঝে ‘Dadaism’ এবং ‘Surrealism’ নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আছে, যেগুলি পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার আলোচনায় ঢোকা যাবে।


বস্তুত ‘Dadaism’ থেকেই ‘Surrealism’- এর উদ্ভব হয়। পরাবাস্তবতার ধারণার প্রবক্তাদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন আঁদ্রে ব্রেঁত, যিনি মনে করতেন এটি হল একটি বৈপ্লবিক আন্দোলন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘Surrealism’ পরিণত হয়েছে ‘Magic realism’- এ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করি ‘Encyclopedia of World Literature in the 20th Century’ বলছে - “Magical realism – the result of a unique fusion of the beliefs and superstitions of different cultural groups that included the Hispanic conqueror, his criollo descendants, the native people and the African slaves.”

‘Magic realism’ শব্দবন্ধটির জন্ম হল কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের বেশ কিছুকাল পিছিয়ে ১৯২৫ সালে যেতে হবে। ঐ বছর ফ্রান্সে কয়েকজন ডাডাপন্থী শিল্পীর একটি ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল, যার সমালোচনা করতে গিয়ে সেই সময়ের বিখ্যাত জার্মান শিল্প-সমালোচক Franz Roh প্রয়োগ করেছিলেন ‘Magischerrealismus’ কথাটি। এর থেকেই বর্তমানে বহু আলোচিত ‘Magic realism’ শব্দবন্ধটি এসেছে। পরবতীকালে চিত্রশিল্পী Georgia O’Keeffe, Frida Kahlo, Edward Hopper প্রমুখরা ছবিতে জাদুবাস্তবতার ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। 

জাদুবাস্তবতার রীতিতে রচিত সাহিত্যে উপকথা, পুরাকথা, কিংবদন্তীবা রূপক ব্যবহারের প্রবণতা থাকার জন্য একে কখনও কখনও ‘Fabulism’- ও বলা হয়ে থাকে। মোটামুটিভাবে তিন দফায় বিশ্বসাহিত্যে জাদুবাস্তবতার তরঙ্গের দোলা লেগেছিল। সূচনাপর্বে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে ইউরোপে জাদুবাস্তবতার ধারা স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। এক্ষেত্রে যুগন্ধর সাহিত্যিক Franz Kafka যেমন একদিকে কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন, তেমনই অন্যদিকে জার্মানীতে ‘Neue Sachlichkeit’ আন্দোলনের প্রবক্তারাও সমানভাবে কৃতিত্বের ভাগ পাবেন। দ্বিতীয় দফায় জাদুবাস্তবতার বিকাশ ঘটে ১৯৪০ ও পঞ্চাশের দশকে লাতিন আমেরিকায়। এই অঞ্চলের সাহিত্যিকরা Franz Roh প্রণীত জাদুবাস্তবতার মূল ধারণার সঙ্গে ফরাসী পরাবাস্তবতার ধারণা এবং নিজেদের দেশের পুরাকথার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সাহিত্য সৃষ্টিতে প্রয়াসী হন। মোটামুটিভাবে বিংশ শতাব্দীর পাঁচের দশকের গোড়া থেকেই নিকারাগুয়ার Ruben Dario, কিউবার Jose Marti ও Alejo Carpentier প্রমুখ সাহিত্যিকদের হাত ধরে প্রাথমিক পর্যায়ে জাদুবাস্তবতার ধারণা জনপ্রিয় হতে থাকে। তৃতীয় দফায় ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে লাতিন আমেরিকার সাহিত্য আম্তর্জাতিক স্তরে প্রবল অলোড়ন তোলে। বিংশ শতাব্দীর ছয় ও সাতের দশকে লাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিক ওঠাপড়ার পালা চলেছিল। ১৯৫৯ সালে কিউবার রাষ্ট্রবিপ্লবের পর যখন সারা বিশ্বের নজর লাতিন আমেরিকার দিকে পড়েছিল তখন সেখানকার সাহিত্যিকরা জাতীয়করণের ইচ্ছা বুকে নিয়ে একজোট হন।এই সময়কালে রচিত লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রধান কারণ হল জাদুবাস্তবতার সার্থক প্রয়োগ। তারপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনায় জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ করেছেন এবং বর্তমানেও করে চলেছেন।


Matthew C. Strecher বলেছেন ‘Magic realism’ বলতে বোঝায় – “what happens when a highly detailed, realistic setting is invaded by something too strong to believe.” আসলে জাদুবাস্তবতা বা Magical realism হল বর্ণনাধর্মী কাহিনীর একটি বিশেষ রীতি যেখানে আপাত বিচারে পার্থিব বস্তু বা বাস্তব জগতের প্রেক্ষাপটে জাদু, অতিপ্রাকৃত বা মিথ উপস্থাপিত হয়। সাধারণভাবে বাস্তবতার আবহে কাহিনীটি উপস্থাপিত হয় এবং তার মধ্যে জাদু বা রহস্যের উপাদানগুলির সন্নিবেশ ঘটে। বিস্তৃততর অর্থে শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে, যেমন – সাহিত্য, চিত্রশিল্প, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ দেখা যায়। তবে বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে সাহিত্যক্ষেত্রে Magic realism শব্দবন্ধটি প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন কিউবার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক Alejo Carpentier। ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত ‘On the Marvellous Real in Spanish America’ প্রবন্ধে তিনি “lo real maravilloso” (the marvellous real) ধারণার প্রবর্তন করেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘The Kingdom of this World’ (১৯৪৯) উপন্যাসের ভূমিকায় Marvellous Real বলে তিনি জাদুবাস্তবতার কথাই বলতে চেয়েছেন। তাঁর মতে লাতিন আমেরিকা মহাদেশে বাস্তবতা ও কল্পনার সীমারেখা চিরকালের মত ঝাপসা হয়ে গেছে, বাস্তবের মধ্যে অতিপ্রাকৃত, অলৌকিক বা কাকতালীয় এসে হানা দেয়। এইজন্যই তিনি বলেছিলেন, “Themarvelous begins to be unmistakably marvellous when it arises from an unexpected alteration of reality. . . . . .from a privileged revelation of reality, an unaccustomed insight that is singularly favoured by the unexpected richness of reality or an amplification of the scale and categories of reality.” ইংরেজিতে অবশ্য ‘Magical Realism’ শব্দবন্ধটি প্রথম প্রযুক্ত হতে শুরু করে ১৯৫৫ সালের পর থেকে। ঐ বছর ‘Magical Realism in Spanish American Fiction’ প্রবন্ধে সাহিত্য সমালোচক Angel Flores লাতিন আমেরিকার সাহিত্যিকদের রচনার কথা আলোচনা করতে গিয়ে magical realism শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে লিখেছিলেন “In magical realism we find the transformation of the common and the everyday into the awesome and the unreal. It is predominantly an art of surprise. Time exists in a kind of timeless fluidity and the unreal happens as part of reality.”

জাদুবাস্তবতা এই শক্তি পেয়েছে কোথা থেকে?  সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ইউরোপীয়ান রিয়ালিজমের উপাদানসমূহ এবং উপকথায় বর্ণিত বা কল্পিত অবিশ্বাস্য উপাদান সমূহকে একসূত্রে গাঁথার ফলে জাদুবাস্তবতা বিশেষ শক্তি পেয়েছে। এই দুটি পরস্পর বিপরীতধর্মী জগৎ খুব কাছাকাছি চলে এসে বা প্রায় মিলে গিয়ে জাদুবাস্তবতার নিজস্ব জগৎ সৃষ্টি করেছে। জাদুবাস্তবতার তত্ত্ব আলোচনায় Zamora, Wendy B. Faris, Lois Parkinson সম্পাদিত ‘Magical Realism : Theory, History, Community’ (১৯৯৫) বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের প্রদত্ত মত অনুযায়ী বলা যায় জাদুবাস্তবতার দুটি রূপ, একটি epistemiological (যেখানে সামান্য পার্থক্যগুলি দশকের বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উদ্ভুত) এবং অন্যটি ontological (যেখানে ল্যাটিন আমেরিকাকেই বিষ্ময়কর বা অবিশ্বাস্য বলে ধরা হয়)। অন্যভাবে বলতে গেলে সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ পাঠকচিত্তে ভাবান্তর সৃষ্টি করতে পারে দুভাবে - হয় কোন চরিত্রের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপলব্ধিকে বিষ্ময়কর বা অবিশ্বাস্য বলে প্রতিপন্ন করে, নতুবা যে পরিবেশের মধ্যে কাহিনীকে এনে ফেলা হয়েছে তাকেই বিষ্ময়কর বা অবিশ্বাস্য করে তুলে।


জাদুবাস্তবতার কয়েকটি মুখ্য ও গৌণ চরিত্রলক্ষণ আছে। মুখ্য চরিত্রলক্ষণগুলি আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় রচনার মধ্যে থাকতে হবে এমন অপরিবর্তনীয় জাদুর আবহ যা প্রাকৃতিক নিয়মের সাধারণ ধারণা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। তার পাশাপাশি থাকবে ঘটনার বাস্তববাদী বা বস্তুতান্ত্রিক বর্ণনা। এই বর্ণনা প্রাথমিকভাবে প্রতিদিনকার জীবনে স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর উপর জোর দেবে, তারপর পুনরায় পাঠ করলে বিষ্ময়কর বা অবিশ্বাস্য ঠেকবে। এই উদ্দ্যেশ্যে প্রায়ই চরিত্রগুলির মানসিকতার চরম সম্প্রসারণ করা হয় ও তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ আবহ ব্যবহার করা হয়। বিশুদ্ধ অর্থে মিথ বা ফ্যান্টাসি বলতে যা বোঝায় তার থেকে এখানেই জাদুবাস্তবতার মূলগত পার্থক্য। সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ তখনই সার্থকতা পাবে যখন পাঠক বাস্তবতার বিষয়ে দুটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন – একটি লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী ও অপরটি তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গী। এই দুটি আপাতভাবে বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গী সমান্তরালভাবে চলতে চলতে হয় মোটামুটিভাবে মিলে যায় বা বিপরীতক্রমে পরস্পরকে মধ্যচ্ছেদ করে। এই দুই প্রকার পরিণতির মধ্যেই জাদুবাস্তবতার রীতিতে রচিত সাহিত্যের সার্থকতা। এখানে কাহিনীর বিস্তার লেখকের উপর নির্ভর করে, কেন্দ্রীয় চরিত্রের অস্তিত্ব প্রায়ই খণ্ডিত হয় এবং অন্যান্য মুখ্য চরিত্রগুলিও ভেঙেচুরে যায়। যে সময়ের প্রেক্ষাপটে কাহিনীটি রচিত তা যেমন প্রায়ই ইতিহাস সম্মত তেমনই বিপরীতক্রমে সময়হীনতাও একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


এবার জাদুবাস্তবতার গৌণ চরিত্রলক্ষণের কথায় আসি। এই ধারার সাহিত্যসৃষ্টি চরিত্রগত ভাবে ফিকশনের সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে প্রায়শই মেটাফিকশনাল হয়ে ওঠে, তার অঙ্গ হিসেবে রূপককে বাস্তব বলে ধরে নিয়ে কাহিনীকার ভাষার জাদুতে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন। তাছাড়া রচনার কাহিনী অংশে বিষ্ময়কর পরিস্থিতি, আশ্চর্যজনক ঘটনার সমাবেশ বা সচেতনভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে মানুষের প্রবৃত্তিগত আদিমতাও অর্ন্তভুক্ত হতে পারে। এর ফলে রচনা পাঠের পর প্রাথমিক পর্যায়ে বহিরঙ্গ বিশ্লেষণে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ধারণা ও তৎসঞ্জাত উপলব্ধিগুলি পরবতী পর্যায়ে অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণে নতুন করে উপলব্ধি করার প্রয়োজন হতে পারে। এরপর আসবে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ কৌশলের দিক। ম্যাজিকাল রিয়ালিস্ট যেসব বিশেষ প্রয়োগ কৌশল ব্যবহার করেন তার মধ্যে তিনটি আলাদাভাবে উল্লেখের দাবী রাখে– পুনরাবৃত্তি, বিপরীত ধর্মীতা এবং পূর্ববর্তী অবস্থার পরিবর্তন।  তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুখ্য চরিত্রগুলির মেটামরফোসিস বা কাহিনীর গঠনগত পরিবর্তন রচনাকে বিশিষ্টতা দান করে। এটা করা অবশ্য খুব সহজ নয়, এক্ষেত্রে রচনার বিন্যাস শৈলী, লিখনভঙ্গী ও ভাষা সেই উদ্দ্যেশেরই অনুসারী হতে হয়। মনে রাখতে হবে জাদুর আবহ প্রায়ই ব্যবহার করা হয় রচনার অভিমুখকে বিধিবদ্ধ পদ্ধতি ও দৃঢ়ভাবে সংস্থাপিত নিয়মের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া কাহিনীর মধ্যে প্রায়ই প্রাচীন লোকবিশ্বাস, প্রচলিত লোকসংস্কার বা স্থানীয় মানুষের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রাচীন প্রথার প্রসঙ্গ থাকে, ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসের প্রতি পাঠকের শ্রদ্ধা জন্মায়। সর্বোপরি সমষ্টিগতভাবে ব্যবহৃত প্রতীক ও জনজাতির মধ্যে সাধারণভাবে প্রচলিত মিথ রচনায় ঘুরেফিরে আসে।


লাতিন আমেরিকার কলম্বিয়ার অমর কথাশিল্পী Gabriel Garcia Marquez তাঁর কালজয়ীসৃষ্টি ‘One Hundred Years of Solitude’ (১৯৬৭) উপন্যাসে জাদুবাস্তবতার তত্ত্বের সার্থক প্রয়োগ করেছেন। তিনি এই উপন্যাসে শুধু Buendia পরিবারের কাহিনীই বলেন নি, প্রকৃতপক্ষে জাদুবাস্তবতার সংজ্ঞাই পুনর্নিধারণ করে দিয়েছেন। তাঁর মতে জীবনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে প্রচলিত কৌশলগুলি যখেষ্ট নয়, তাই তিনি একটি বিকল্প কল্পরাজ্য গড়ে তোলেন। একটি সাক্ষাৎকারে মার্কেজ জাদুবাস্তবতা সম্পর্কে যা বলেছিলেন তার সারাংশ হল বাস্তবের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গিয়ে আমরা অনেক অবাস্তব ও অন্ধবিশ্বাসের সাহায্য নিই, যেমন– ম্যাজিক, প্রোটেম, টেলিপ্যাথি, প্রিমোনিশন্স প্রভৃতি প্রসঙ্গোপকরণ এখানে খুব কার্যকরী হয়।

জাদুবাস্তবতার রীতির কাহিনী রচয়িতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন ব্রাজিলের Jorge Amado এবং Paulo Coelho, আর্জেন্টিনার Jorge Luis Borges এবং Julio Cortazar, চিলির Isabel Allende, তুরস্কের Orhan Pamuk এবং রাশিয়ার Mikhail Bulgakov। ইংরেজি সাহিত্যে এই রীতির মুখ্য প্রবক্তারা হলেন Salman Rushdie, Alice Hoffman ও Nick Joaquin। জার্মানির লেখক Gunter Grass, ঘানার Kojo Laing, সিয়েরা লিওনের Syl Cheney-Coker এই রীতি অনুসরণ করেছেন। এই ধারার হিস্প্যানিক লেখকদের মধ্যে আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম হল গুয়াতেমালার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক Miguel Angel Austarius, মেক্সিকোর লেখিকা Elena Garro এবং ভেনেজুয়েলার ঔপন্যাসিক Romulo Gallegos।


জাদুবাস্তবতার ধারায় রচিত সাহিত্য বিচার করতে গেলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এই রীতির একটি প্রবণতা হল কাহিনীতে বর্ণিত দৃশ্যকে পাঠকের কাছে অপরিচিত করে তোলার সচেতন প্রয়াস, যার ফলে পাঠকের মনে হতে পারে তিনি পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নন। রচনার আরো গভীরে প্রবেশ করলে তাঁর আরো মনে হতে পারে তিনি এতক্ষণ যা পড়লেন ও বুঝলেন তা অত্যাশ্চর্য, কারণ এই রীতির রচনায় এমন কিছু বক্তব্য বিষয় আছে যা তাঁর কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ঠেকে। এই প্রসঙ্গে Rowland Wilson বলতে চেয়েছেন জাদুবাস্তবতার রীতিতে রচিত সাহিত্যের পাঠককে রচনার গভীরে ডুব দিয়ে রসাস্বাদন করতে হলে ইউরোপীয় রিয়ালিজম ও ফ্যাবুলিজমের ধারণার মধ্যে ঘোরাফেরা করতে হয়।


জাদুবাস্তবতাকে অনেকেই পৃথিবীর যাবতীয় দুর্দৈব, অবমাননা ও যন্ত্রণার বিরুদ্ধে নিঃসঙ্গ ব্যক্তিমানুষের  হাতিয়ার রূপে দেখতে চান। কেউ কেউ এটাও মনে করেন সম্ভাব্য সবরকম জাগতিক দুর্বিপাকের থেকে নিরাপদে থাকার জন্য আধুনিক মানুষ জাদুবাস্তবতার আড়ালে আশ্রয় নেয়। পরাবাস্তবতার সঙ্গে জাদুবাস্তবতার একটি মূলগত পার্থক্য আছে। পরাবাস্তবতা আমাদের যে প্রশান্তির জগতে নিয়ে যায় সেখানে মানুষের পরিশ্রান্ত মন বিশ্রাম পায়, জগতের কাঁটার খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত মানবচিত্তে সান্ত্বনার প্রলেপ লাগে। আর জাদুবাস্তবতা আপাত দৃষ্টিতে প্রচ্ছন্ন বাস্তবের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন থেকে আসলে বাস্তবের অভিঘাতকেই তীব্রতর করে। গুয়াতেমালার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক Miguel Angel Asturias বলেছিলেন, “However life treats you, as time goes by you always get the feeling you’ve lost life in the very living of it.” তিনি এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে আসলে কোন সীমারেখা নেই বা বাস্তব ও কল্পনার মধ্যেও কোন ভেদ নেই।


এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে লাতিন আমেরিকার লেখকদের মধ্যে সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগের প্রবণতা এত বেশী করে দেখা যায় কেন? এর উত্তরে বলা যায় লাতিন আমেরিকার দেশগুলি সুদীর্ঘকাল বঞ্চনা, লাঞ্ছনা ও অধীনতা দেখেছে। এই দুঃখময় অভিজ্ঞতার থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই লেখকগণ সাহিত্যের এই রীতিকে অবলম্বন করেছিলেন। এই ব্যাখ্যার পাশাপাশি আরো একটি দিকের প্রতিও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জাদুবাস্তবতার ধারণা কিন্তু ইউরোপীয় ‘ন্যাচারালিজম’ বা ‘রিয়ালিজমের’ ধারণার বিরুদ্ধেধীরে ধীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেদিক থেকে বিচার করলে জাদুবাস্তবতার ধারায় সৃষ্ট রচনারকিছু কিছু ভঙ্গী বা ধাঁচ নিশ্চিত ভাবেই উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের লক্ষণ বিশিষ্ট। জাদুবাস্তবতার ধারায় রচিত সাহিত্যে রাজনীতির ছোঁয়া থাকতে পারে বা লেখকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিফলন ঘটতে পারে। জাদুবাস্তবতার ধারণা ইউরোপে সৃষ্ট একটি শব্দ থেকে লাতিন আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয়ে যেমন সাহিত্যের একটি প্রধান ধারার রূপ লাভ করেছে, সেভাবেই শিল্প সমালোচনায় ব্যবহৃত ধারণা থেকে সরে গিয়ে সাহিত্যের পাতায় রাজনৈতিক চিন্তাধারারও বাহক হয়েছে।আরো অনেকের মতই Alejo Carpentier মনে করেন জাদুবাস্তবতার ধারণালাতিন আমেরিকার পক্ষে স্বাভাবিকভাবে খাপ খেয়ে যায়, কারণ সেখানকার আদি জনগোষ্ঠীগুলি কিন্তু ইউরোপের জনগোষ্ঠীগুলির মত প্রাকৃত এবং অতিপ্রাকৃতের মধ্যে কোন লক্ষ্মণরেখা টানে না। Marquez একদা ‘The Atlantic’- কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছিলেন – “Surrealism runs through the streets.” পরবর্তীকালে Marquez বলেছিলেন – “Surrealism comes from the reality of Latin America.” এই বক্তব্যে তিনি জাদুবাস্তবতার ধারণা থেকে উদ্ভুত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। প্রথমত, ফ্যান্টাসি বরাবরই লাতিন আমেরিকার পরিপ্রেক্ষিতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দ্বিতীয়ত, জাদুবাস্তবতা কখনই ইউরোপ থেকে আমদানী করা ঔপনিবেশিকতা থেকে উপজাত ধারণা নয়। তৃতীয়ত, জাদুবাস্তবতার সঙ্গে জাতীয়তাবাদের ভাব জড়িত। চতুর্থত, লাতিন আমেরিকা একটি উপনিবেশমাত্র নয়, তার নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার ধারা আছে। এর থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় ১৯৬০ -এর দশকে যখন সারা বিশ্বে জাতীয়করণ চলছিল, তখন জাদুবাস্তবতা ছিল ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত একটি বিশেষ ভাব যার সঙ্গে অনেকখানি আবেগও মিশে ছিল।

Marquez প্রমুখ লাতিন আমেরিকার লেখকরা প্রায়শই সমাজের প্রান্তবাসী মানুষদের গল্প বলার জন্য জাদুবাস্তবতার ব্যবহার করেছেন যা স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সমালোচনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন একটি অঞ্চলের দরিদ্রশ্রেণীর মানুষের জীবনচর্যা প্রায়শই জাদুবাস্তবতার রীতিতে রচিত সাহিত্যের উপজীব্য হওয়ায় তার মধ্যে সমাজব্যবস্হার নানারকম বিচ্যুতির সমালোচনা অন্তর্নিহিত থাকে। এই রীতি ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা, মার্কসবাদ, নারীবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সমালোচনা করা হয়েছে। যে দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই দেখা হোক না কেন এই রীতির অনুসরণকারী সাহিত্যিকরা সমাজের প্রান্তসীমায় থেকে ক্ষমতার কাঠামোর বাইরে দাঁড়িয়ে সাহিত্যসৃষ্টি করেছেন।

জাদুবাস্তবতার ধারায় সৃষ্ট সাহিত্যে বাস্তববাদের ভিত্তিতে রচিত ফিকশন ও ফ্যান্টাসির মাঝে কোন স্পষ্ট সীমারেখা থাকে না এবং লেখক নিজেই সচেতন ভাবে তা অস্পষ্ট রাখেন। এই উদ্দেশ্যে এক এক জন লেখক এক এক রকম পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যেমন ‘100 Years of Solitude’ (১৯৬৭) উপন্যাসে Gabriel Garcia Marquez সময়ের প্রবহমানতাকে ব্যবহার করেছেন, ‘Beloved’ (১০৮৭) উপন্যাসে Toni Morrison মৃত চরিত্রদের উপস্থিত করেছেন, আবার ‘The Tiger’s Wife’ (২০০৯) উপন্যাসে Tea Obreht টেলিপ্যাথির ব্যবহার করেছেন।  আরো একটি জায়গায় ফ্যান্টাসির সঙ্গে জাদুবাস্তবতার ধারায় রচিত উপন্যাসের পার্থক্য আছে। শেষোক্ত রীতির লেখকরা তাঁদের রচনায় যে জগৎ সৃষ্টি করেন তাতে জাদুবিষয়ক তথ্যাবলী ইচ্ছাকৃত ভাবেই উহ্য রাখেন, কারণ তাঁরা অত্যাশ্চর্য বা অদ্ভুত ঘটনাগুলিকে সাধারণ ঘটনার মত করেই দেখাতে চান। একটু অন্যভাবে বললে বলতে হয় তাঁরা অবিশ্বাস্য ঘটনাকে দৈনন্দিন জীবনে আর পাঁচটা স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনার মত করে উপস্হাপন করতে চান।

মার্কেজের ‘100 Years of Solitude’ সম্ভবতঃ জাদুবাস্তবতার রীতিতে রচিত সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত সাহিত্যকীর্তি, জনপ্রিয়তার বিচারেও এই রচনাটির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া শক্ত। কিন্তু তাঁর যে দুটি রচনার কথা না বললে অন্যায় হবে সেগুলি হল ‘A Very Old Man with Enormous Wings’ এবং ‘The Handsomest Drowned Man in the World’। তাঁর আগে বোর্হেসের লেখা অনেকগুলি গল্পেও এই রীতির সার্থক প্রয়োগ দেখা যায়, বিশেষ করে বলব ‘Ficciones’ (১৯৪২) নামক ছোটগল্পের সংকলনটির কথা। সমালোচক Angel Flores মনে করেন ১৯৩৫ সালে বোর্হেসের গল্প দিয়েই সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার জয়য়াত্রা শুরু হয়েছিল। এছাড়া আলেহ কার্পেন্তিয়ের এই রীতি অনুসরণ  করে বেশ কয়েকটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। তবে মার্কেজের উপন্যাসের বিশ্বজুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভের অন্যতম কারণ হল তিনি ঢাউস আকারের ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার পথে মোটেই হাঁটেন নি, বরং যেভাবে রচনাকে দ্রুত একের পর এক অধ্যায়ে বিন্যস্ত করেছেন তাতে উপন্যাসটি কখনই গতি মন্থরতায় ভোগেনি। পাশাপাশি সরল ও স্বকীয়তাপূর্ণ রচনাশৈলীর গুণে তিনি পাঠকের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছেন। এছাড়া মেক্সিকোর Juan Rulfo রচিত উপন্যাস ‘Pedro Paramo’ (১৯৫৫), চিলির লেখিকা Isabel Allende রচিত উপন্যাস ‘The House of Spirits’ (১৯৮২), মেক্সিকোর ঔপন্যাসিক Laura Esquivel -এর ‘Like Water for Chocolate’ (১৯৮৯) প্রভৃতিও পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বাইরের লেখকরাও জাদুবাস্তবতার রীতি ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন। জর্জিয়ার লেখক Otar Chiladez -এর উপন্যাস ‘A Man Was Going Down The Road (১৯৭৩)’, সলমন রুশদির উপন্যাস ‘Midnight’s Children’ (১৯৮১), মার্কিন লেখিকা Gloria Neylor-এর লেখা ‘The Women of Brewster Palace’(১৯৮২) এবং নাইজেরিয়ার লেখক Ben Okri রচিত উপন্যাস ‘The Flemished Road’ (১৯৯১) প্রভৃতিও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে।


সাহিত্য লক্ষণের তুলনামূলক বিচারে উত্তর- ঔপনিবেশিক সাহিত্য ও জাদুবাস্তবতার রীতির কতখানি সাদৃশ্য আছে তা নিয়ে অবশ্যই বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে, কিন্তু একথা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে পরবতীকালের Naguib Mahfouz, Jean Rhys, Margaret Atwood প্রভৃতি ঔপনিবেশিকতা উত্তরকালের সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অস্তিত্ব নিয়ে যে ধারায় লিখেছেন জাদুবাস্তবতার রীতি তার পথপ্রদর্শক।





Comments

  1. জাদুবাস্তবতার লেখাটি অসাধারণ। কবিকে নিয়ে লেখাটাও অপুর্ব।

    ReplyDelete

Post a Comment