গদ্য - প্রণব চক্রবর্তী



সত্যটা কোথায় হে জগাদা (জগদীশ্বর)


যে কোন দিক দিয়েই তুমি যেতে পারো  না-ভালো-লাগার সেই ভাসমান উপলে। এ এক এমন অদেখা প্রান্তর, যেখানে না গেলে জীবনের অনেক অসম্পূর্ণতার গল্প ধীরে ধীরে পল্লবিত হতে থাকবে বেমানান হেঁয়ালী ও মিথ্যেভাষণে। এসো বিকেলের এই গা-ঊদলা করা আলোর পাশে কিছুক্ষণ বসা যাক। ধরো আমাদের সামনে সেই প্রবহমান নদীপ্রস্তাব। মুখর ও নিরন্তর ঢেউসম্ভবি। আর অল্প কিছু পরে চরাচর ব্যাপ্ত হবে অধোবদন আঁধারে। কফিপ্রস্তাবের মতো নেমে আসবে রুমালের কিনার ছুঁয়ে আনত ক্ষুধা। 


আর অন্তহীন শিরোনামের এক একশব্দের গল্পের বিকীরিত সংবেদন স্বাধীনতা। এবং স্বাধীনতাই সে গল্পের অবর্ণিত ও সম্ভাব্য যাবতীয় চরিত্র, চরিত্রহীনতা, ঘটনা ও অঘটনেরও অদৃশ্য সংঘটক ও নিয়ন্ত্রক।  তথাপি আমাদের এজেণ্ডায় না-ভালো-লাগার শুলুক সন্ধানের শুরুতেই একটা মরবিড চিত্রকল্প নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। ভাববার প্রয়োজন অনুভূত হতেই লম্বা একটা বিসর্জনের ছবি ভেসে ঊঠলো প্যানোরামায়। ক্যামেরা রোল-অন, প্লীজ এখানে এখন কেউ নগ্ন থাকবেন না কারণ আমরা এখন না-ভালো-লাগা প্রান্তরের উদ্দেশ্যে নেভিগেট করছি। আমাদের নির্বাপিত আমোদের শিরা উপশিরা বেয়ে দপদপ করছে বিশীর্ণ অভিলাষ, স্তিমিত তরংগের ভ্যালা নিকষ বিন্দুর মতো দূরবর্তী কোলাহল বেয়ে বৈঠা ঠেলে আসতে আসতেই ছিঁড়ে যায় পাল, মাস্তুল রোদচিহ্ণহীন, ভবিষ্যৎ হাওয়ার ভরসায় ভাঙে তবু ডোবেনা আস্কন্ধ চিহ্নহীনতায়। যেহেতু আলোচ্য প্রান্তর কোন দিক জানা নেই  না আমার, না আমি ব্যাতীত এই বিস্তৃত মহাবিশ্ব, জীব ও জড়, স্থাবর জঙ্গম, আলো আঁধার, পঞ্চভূত জল, মাটি, আকাশ, বায়ু, আগুন, পঞ্চ কর্মেন্দ্রীয় চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক, পঞ্চ জ্ঞাণে্ন্দ্রীয় রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শ্রবণ এমন কি গণিকালয় বা কর্পোরেট হাউস, কবরস্থান বা ক্রেমেটোরিয়াম, শেয়ার বাজার, সেনসেক্স বা সঙ্কটকালীন অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর ৫ দিন ব্যাপী অর্থহীন লম্বা ভাষণ---  কেঊই জানে না, অতএব সন্ধিপ্রস্তাব। সন্ধি অজানার সাথে, অজ্ঞতার সাথে, আপতকালীন সর্বজনে বিশ্বাসের সাথে, এমন কি একূল ওকূল দুকূল খাওয়া যে নদী আমাদের ঘর গেরস্থালীর যাবতীয় প্রবহমানতার প্রতীক, তার সাথেও সন্ধি আসন্ন সন্ধ্যার এই সন্ধানী যৌথচারিতায়। এসো তবলা তো বোলা সহযোগে আগে কিছুক্ষণ বৃন্দগান হোক। যেমন ধরো, তুমি উৎপাদনের কথা বলতে শুরু করতেই মান্যতাহীন এক কোলাহল শুরু হলো। কেন? কারণ তুমি উৎপাদনের কেউ নও তাই তোমাকে কেউ শুনতে চায় না, তোমাকে কেউ বিশ্বাস করে না। তুমি ভোক্তা। তাই তোমার অবয়ব জুড়ে বিষ্ঠাত্যাগের  অভিব্যক্তি ব্যাতীত যেহেতু অন্য কোনও সুপার ভাসমল বা ছেঁড়াছিড়ি চুলের চকচকে হৃৎযৌবন পুনরুদ্ধারের ফর্মুলা প্রতিভাত হয় না, বলতেই হচ্ছে  না-ভালো-লাগা  প্রান্তর তোমার অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য সন্ধান, যাকে এড়াতে স্বয়ং আমিও পারি না। আমিও শব্দে এসেই পাঠক প্রবল ধাক্কা, এমন কি ক্ষুব্ধ হলেও বলার কিছু নেই। বস্তুত এই 'আমিও' শব্দটি এখন আদৌ প্রতিবেদকের কোন পৈর্তৃক সম্পত্তির ঘোষণা নয় বা এমন কোনো সর্বনাম নয় যাকে দুপায়ে শিকল বেঁধে ছড়িয়ে দিয়েছে লেখক। না, আদৌ তেমন কিছু নয়। শব্দটি তীব্রভাবে পাঠকের জন্ম ধরে নেড়ে দেওয়া এক রাষ্ট্রীয় একনায়কত্বের বিরুদ্ধে একবুক ঘৃণার উত্তরাধিকার। যা চূর্ণতার দিশায় উজ্জ্বল এই শব্দখেলার ভূত ভবিষ্যৎ তোলপাড় কোরে জন্ম নেওয়া এক আকাশবিদারী চিৎকার...  সব ঝুট হ্যায়... সব ঝুট...


 



Comments

  1. বাহ!!! প্রণব দা 🍁🍁🍁

    ReplyDelete
  2. Tapos das তোমাকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার জন্য । ভালো থাকো ।

    ReplyDelete

Post a Comment