অনুগল্প - শুভঙ্কর পাল



প্রতিহিংসা 



কাল রাতে ঘুমোতে পারিনি সে। শরীর অপেক্ষা মনের ভিতর ক্ষতটা বড্ড বেশি। কিছুতেই মেলতে পারে না। হঠাৎ বিছানার উপর বসে পরে। ঘেমে নেয়ে ওঠে অনিমেষ। টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢক ঢক করে জল খেয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। জানালাটা খোলায় ছিলো এই গরমের হাত থেকে বাঁচতে। বাড়ির গেটের কাছের শুকনো জামরুল গাছের ডালে একটা পেঁচা বসে থাকে শিকারের সন্ধানে। মনে হচ্ছিল সে যেনো আমাকে বিদ্রূপ করছে। কাল একটু বেশি গিলেছিলো অনিমেষ। আসলে একলা জীবনে তাকে শাসন বা অনুশাসন করবার কেউ নেই যে। 


এই যা বলাই হলো না এতক্ষণ। আসলে অনি ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছিল। একপাক কাদার মধ্য তার পা আটকে গেছে। যতই চাইছে ততই আরো তলিয়ে যাচ্ছে সে। একসময় মাথা বাদে সবটাই ডুবে যায় কাঁদায়। সে বাঁচবার জন্য হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়েছিল তিন্নির দিকে। তিন্নি আসলে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। সে কিছুতেই অনিকে বাঁচাবার জন্য হাত বাড়ায় না। বরং কী এক ভয়ংকর প্রতিহিংসার আগুন যেন ওর চোখে মুখে। এরপর একটু এগিয়ে এসেও ফিরে যায় তিন্নি বাড়ির পথে। আর ভয়ংকর চিৎকার করে অনি ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। অনি কিছুতেই মেলাতে পারেনা তিন্নির এই প্রতিহিংসার কারণ কী? সেই তো ফ্রক পড়ার বয়স থেকে যেদিন ওর প্রথম যৌবনের প্রবেশের ছাড়পত্র মিলেছিল, সেদিন থেকেই বড্ড আরচোখে সে চায়। মাঝে মাঝে ভয় হতো ওর চোখের দিকে চেয়ে। মনে হতো ওর চোখ যেন কী তীব্র ক্ষুধা নিয়ে আমার প্রতিটি লোমকূপ শুষে নিতে চাইছে। একদিন ভরা বৃষ্টিতে দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তিন্নি ছাদের উপর উঠে ভিজতে থাকে। ভেজা শরীর বেয়ে ঠিকরে পড়তে থাকে আষাঢ় হয়ে ওঠার বাসনা। সেদিন আমিও বৃষ্টি মেখেছি খুব। হঠাৎ কী যে হলো, তিন্নি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে অনিকে। অপ্রস্তুত অনি কোনদিন এভাবে ভাবেনি তিন্নিকে। তার সমস্ত আবদার ফিরিয়ে দিয়ে অনি ঘরে ফিরে যায়। সেই ক্রোধ এতো যে ভয়ংকর হতে পারে সে তার ভাবনাতেও আসেনি। 


কারখানার ঘড়িতে রাত দুটোর ঘণ্টা বেজে ওঠে। পেঁচাটা ততক্ষণে ছো মেরে এক ছুঁচো ইঁদুর তুলে নিয়ে কোটরে ফিরে যায়। শুধু যাবার আগে গাছের ডালে একটা নখের আঁচড় রেখে যায়।



Comments