"কবিরা এমন পুরাতন
কথা বলেন যাহা আমার পক্ষেও খাটে, তোমার পক্ষেও খাটে; যাহা আজও আছে, কালও আছে,
আগামী কালও থাকিবে। যাহা শুনিয়া সুদূর অতীত হইতে সুদূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত
সকলে সমস্বরে বলিয়া উঠিতে পারে, ঠিক কথা! যাহা শুনিয়া আমরা সকলেই আনন্দে বলিতে
পারি- পরের হৃদয়ের সহিত আমার হৃদয়ের কি আশ্চর্য যোগ, অতীত কালের হৃদয়ের সহিত
বর্তমান কালের হৃদয়ের কি আশ্চর্য ঐক্য! হৃদয়ের ব্যাপ্তি মুহূর্তের মধ্যে বাড়িয়া
যায়!"
--------------------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
চিরচেনা পৃথিবী আজ
একেবারে থমকে গেছে। গত কয়েক মাস লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন, সোশ্যাল
ডিসট্যান্সিং এরকম কতগুলি অপ্রচলিত শব্দকে ঘিরেই চলছে আমাদের অস্বাভাবিক যাপন।
চীনের উহান থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ থাবা বসিয়েছে ১৮৫ টিরও বেশি দেশে। এই ভয়াবহ
অতিমারীতে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এর সাথে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় আম্ফান এর
তাণ্ডব, দেশের বেশ কটি রাজ্যে পঙ্গপালের উপদ্রব এবং আরো নানাবিধ সমস্যায় আমাদের
দেশ আজ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। দেশ তথা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বস্তুতঃ
মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির
ক্ষেত্রেও। এখন এক অস্থির বিপন্নতা ও হতাশাই যেন আমাদের প্রতিদিনের
সঙ্গী। কিন্তু এই হতাশাই তো শেষ কথা নয়। আমাদের জীবন আবারও স্বাভাবিক হয়ে
উঠবে, হার স্বীকার করবে সমস্ত প্রতিকূলতা, এই দৃঢ় বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেই এক নতুন
আগামীর সন্ধানেই 'কথালহরী'র যাত্রা শুরু হোল।
মানসিক অস্থিরতা ও
বিপন্নতা বোধ থেকে আমাদের কিছুটা হলেও মুক্ত করতে পারে সাহিত্য। মানুষের
ভাবনা-চিন্তা, দর্শন-চেতনা, অনুরাগ-বিরাগ, আশা-নিরাশা, এই সব কিছুর প্রকাশের
মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে সাহিত্য। যদিও আমরা সকলেই জানি সাহিত্যের ক্ষেত্রে
প্রিন্ট মিডিয়ার কোন তুলনা নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট ছোট প্রিন্ট
ম্যাগাজিন গুলি অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে। কিন্তু সাহিত্য তো থেমে থাকতে পারে না,
থেমে থাকতে দেওয়া যায়না। আর এর একমাত্র বিকল্প ডিজিটাল মাধ্যম। তাই ভবিষ্যতের কথা
মাথায় রেখে, অনলাইন ম্যাগাজিনের গুরুত্ব ও ব্যাপকতা দেখেই আমাদের এই প্রয়াস
'কথালহরী'।
আমাদের এই স্বপ্নকে
বাস্তবায়িত করতে দু'জন মানুষের ভুমিকা অপরিসীম। প্রথমজন কথালহরীর মুখ্য উপদেষ্টা,
প্রসিদ্ধ কবি ও গদ্যকার শ্রী সুবীর সরকার। যাঁর হাত ধরেই আমরা বহু গুণী ও প্রসিদ্ধ
কবি সাহিত্যিকদের কাছে সহজেই পৌঁছতে পেরেছি ও অসাধারণ লেখাগুলি সংগ্রহ করতে
পেরেছি। দ্বিতীয়জন কথালহরীর আর এক উপদেষ্টা, কবি ও লেখিকা মঞ্জুশ্রী রায়। যিনি
আমাদের ব্লগজিনটিকে সহজপাঠ্য ও দৃষ্টিনন্দন রূপে সাজিয়ে আমাদের হাতে তুলে
দিয়েছেন। এই দু'জন মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করি।
সেই সঙ্গে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই চিত্রশিল্পী শ্রীহরি দত্তকে, যিনি সাম্প্রতিক
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার করুণ বিষয়টিকে নিয়ে একটি বাঙ্ময় প্রচ্ছদ চিত্র এঁকে
দিয়েছেন কথালহরীর জন্য। এছাড়াও আমাদের এই নতুন উদ্যোগকে যাঁরা নানাভাবে সহযোগিতা
করেছেন, উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে সাহস যুগিয়েছেন, শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন,
তাঁদের সকলের প্রতি আমরা আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
কথালহরীর আবির্ভাব
সংখ্যাটিকে আমরা উত্তরবঙ্গের সেইসব কবি ও সাহিত্যিকদের লেখা দিয়ে সাজিয়ে তোলবার
চেষ্টা করেছি, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা করে আসছেন এবং বাংলা সাহিত্য জগতে
প্রত্যেকেই সুপরিচিত নাম। তাঁদের কাছে অনুরোধ করতেই তাঁরা লেখা পাঠিয়ে আমাদের দিকে
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সকলকে আমরা অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা
জানাই। এমন আরো অনেক গুণী মানুষদের কাছে আমরা সময়ের স্বল্পতা বা যোগাযোগের
অভাবে পৌঁছতে পারিনি। আমাদের বিশ্বাস পরবর্তী সংখ্যাগুলি তাঁদের আশীর্বাদধন্য
হবে।
এই সংখ্যাটিতে কবিতার সংখ্যা
বেশি রাখা হোল। পরবর্তী সংখ্যাগুলিতে এর তারতম্য হতেই পারে। পরের সংখ্যা থেকে আমরা
উত্তরবঙ্গের বাইরে থেকেও লেখা সংগ্রহ করবো। লেখা পাঠাতে পারেন বাংলাদেশ থেকে এবং
প্রবাসী বাঙ্গালীরাও। লেখা থাকবে নবীনদেরও। কারণ সাহিত্যকে কখনোই কোনরকম গন্ডির
ভেতর আবদ্ধ রাখা যায়না। আমরা চেষ্টা করব সম্পাদনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব
প্রদান করতে। ভুল-ত্রুটি থাকলে পাঠকবৃন্দ অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ও
সাথে মহামূল্যবান মতামত ও পরামর্শ দেবেন।
সুস্থ থাকুন, সৃজনে
থাকুন, কথালহরীর সাথে থাকুন।
সময়োপযোগী প্রচেষ্টা, সাহিত্যের নতুন দিগন্তের সূচনা হলো, সমৃদ্ধি কামনা করি
ReplyDeleteদারুন সম্পাদকীয়। সাহিত্য ক্ষেত্রে সঠিক মনিমানিক্য খুঁজে নিয়ে আপন ছন্দে এগিয়ে চলুক কথালহরী, এই আশা রইলো।....মধুমিতা দেব
ReplyDeleteখুব সাজানো গোছানো, নানা বিভাগের নানা বিষয়ের আলোকপাতে সমৃদ্ধশালী 'কথা লহরী' পত্রিকা।
ReplyDelete