গল্প - শুভময় সরকার


নদীমাতৃক


( ১)
নদী মানে নৌকো, ছই, লণ্ঠনের মৃদু আলো আর অপার রহস্যময়তা! আর এই রহস্যময়তা থেকেই নাগরিক জীবনকে ছুঁয়ে থাকে অনি। এভাবেই ছুঁয়ে থাকতে চায়, একটু দূর থেকে কিন্তু খুব দূরে নয়। নাগরিক জীবনকে পুরোপুরি ছেড়ে যেতে ভয় হয় অনির। অদ্ভুত এক আশ্রয়হীনতা কাজ করে আর সেই আশ্রয়হীনতা থেকেই আশ্রয়সন্ধানের তাগিদে ছুঁয়ে থাকতে চায় নদীপাড়ের নাগরিক জীবনকে!

চিরকালই নদীমাতৃক অনি।সমুদ্র ওকে টানেনা। গভীর হয়েও গভীরতা কম, উচ্ছ্বাস বেশি।জীবনকে ছুঁয়ে থাকে অনি এই মাঝনদী থেকে।সামনে  পেছনে নিকষ কালো অন্ধকার! দূরে জীবনের স্রোত। এই অনিশ্চয়তা থেকে যেনো ওই আলোর স্রোতে চলমান শহরকে আরও বেশি প্রাণবন্ত লাগে। ছইয়ের নীচে আজ ঢোকেনা অনি। কালো জলের স্রোতে চলতে চলতে ওপরের আকাশের দিকে তাকায়। এতো বড় ক্যানভাসে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হয়।ওই দূরের আলোকোজ্জ্বল বাড়িগুলো, চলমান শহর,ঝলমলে পথঘাট সবই বড় ক্ষুদ্র মনে হয়!



অনি জানেনা এ নৌকো কোথায় যাবে। কোনো মাঝিমাল্লা কিচ্ছু নেই,হাল ধরতে হয়না এ নৌকোয় কিন্তু সব কিছু হয় নিয়মমাফিকই। অনন্ত স্রোতে ভেসে যাওয়া। কোথাও কোনো বিচ্যুতি নেই, নেই ভুল পথে চলা,পথ হারানো। তবু প্রতিমুহূর্তে নৌকোর গতি খুব ধীরে হলেও বাড়তে থাকে। নদী যতো এগোয়, স্রোতের গতি ততো বাড়ে!  সময় কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, প্রতি পলে অনুপলে। চারপাশে ঘেরা জলাশয়ের কোনো পরিণতি নেই, সে হলো স্থির, স্থবির। আর সমুদ্র উচ্ছ্বাসপ্রবণ হলেও বাঁধা থাকে তার বিশালত্বে। সীমাহীন এক বিশাল জলাধার। অমৃত, গরল সব উঠে আসে। চলমান কেবল নদী, শুরু থেকেই এক পরিণতির দিকে যাত্রা।
(২)
                        
গভীর রাতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় অনি। ঘুমোচ্ছে শহর। গরম কমে হাল্কা হিমেল হাওয়া। স্রোতের গতি বাড়তেই ঘুম ভেঙে যায় ওর। সারা শরীর বেয়ে ঘাম, জব জব করছে শরীর। অনি জানে এই সময়,এইসব অস্ত্বিত্বহীনতার বিপজ্জ্বনক সময় ঘুম ভেঙে যায়, স্বপ্ন ভেঙে যায়। বাইরের ব্যালকনিতে এসে সিগারেট ধরায়, ধোঁয়ার রিং ছাড়ে, বৃত্ত হয়, বৃত্ত ভাঙে। বৃত্ত ভাঙতে না চাইলেও ভাঙে বাইরের হাওয়ায়। তবু বৃত্ত থেকে বৃত্তান্তরের অনন্ত যাত্রায় অনি থেকে যায়।

এই মাঝরাতের ঘুমন্ত শহরকে ছুঁয়ে থাকে অনি,চিরকালের ভীরু, মধ্যবিত্ত অনির্বাণ বসু।




Comments