একগুচ্ছ কবিতা - জ্যোতি পোদ্দার



প্রতিবেশি


একজন পাতা লকলক করে 

              নড়ছে আর নড়ছে

আর ভকভক করতে করতে

উগড়ে দিচ্ছে দু'হাতে

সবুজ আর হলুদ বমি।


ওয়াক থু 

     ওয়াক থু...


লিকলিকে পাতলা শরীরে

খামছির দাগ

চিমটির কুচানো আঁচড় 

আর সারা গায়ে বিবর্ণ শ্যাওলা।


আমার নিকট প্রতিবেশি

              জানলার পাশে

              দেয়ালের পাশে

মাঝখানে নয় ইঞ্চি করিডোর।

হাত বাড়ালেই

হাতের পাতায়

একজন পাতা রাখে মাথা

                  নীরবে নিভৃতে

ভয় আর বিস্ময়ের  চোখে।




মেজবান


একবার এক মিশ্র বনে গিয়েছিলাম।


এটা সেটা কত কী 

                   সাথে ছিল আমাদের!

বোতল ছিল

গ্লাস ছিল

ছিল কুচি কুচি সাদা সাদা বরফ

                     আর রুচি চানাচুর 


ইচ্ছে করেই তাঁবু নেইনি।


যেখানে রাত সেখানে কাতের

মতো করে মেহগনির 

গোঁড়ায় শুয়েছিলাম সারারাত।


মেহগনি তাঁর পাশের মেহগনিকে

ডেকে এনে খুব নিকটে 

হাত ছোঁয়া উঁচুতে পাতার ছাউনি

বানিয়ে দাঁড়িয়েছিল সারারাত।




ভোজ


একবার রিঙ ছুঁড়ে সাবান পেয়েছিলাম।

কসকো সাবান।

                   দুই টাকার বাজিতে

পীত রঙের কসকো সাবান।


মোড়কে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে 

সাবান ফেনা বাথটবে ডুবে আছে মেয়েটি।


মোড়ক খুলবার আগেই

আমি টাওয়েল ধরে টান দিয়েছিলাম


ঘাঢ় বাঁকিয়ে  তেড়েফুঁড়ে আসবার 

               সাথে সাথে বুঝেছিলাম

মেয়েটির শুধু বড় খোঁপা নয়।

কথার চোপাও আছে।




মেটে রঙের মুখশ্রী


কতকিছু ফেলে দিয়েছি।

                          ফেলে দিতে হয়।

এই যেমন মুঠোভরা রঙিন মার্বেল।

অথবা আয় রে আমার গোলাপফুল


ফেলে ফেলেই বাড়ন্ত পথ হয়।

পথের বাঁক হয়।

কথার ভাঁজে একান্ত বীজমন্ত্র হয়।


টানাটানা চোখের গোলগাল বাটার মতো

মেটে রঙের মুখশ্রী কোথাও ফেলতে পারিনি।


কুমোর পাড়ার একথাল কাঁদামাটির

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুতুলের 

সারিতে দেখেছিলাম তাকে

                     কড়া সোঁদাগন্ধ নাকে মেখে।

                                     বিষ্ময়ভরা চোখে।




আমি


মুখ আঁকতে চেয়েও পারিনি।

আদল আসে না।

                 ভেঙে ভেঙে যায়।

রেখার গতিপথ কেবলই পাল্টে যায়।


মুখ ও মুখোশের সীমান্তরেখা

না থাকার কারণে প্রায়ই

মুখকে মুখোশ

আর মুখোশকে মুখ ভেবেছি বহুদিন।


মুখোশও আঁকতে পারছি না।

কেবলই ছানিপরা চোখের মতো 

                   সবকিছু ব্লার হয়ে যায়।


একবার জলের শরীরে মুখ দেখে

আঁতকে উঠেছি

                  এ কীসের প্রতিবিম্ব?

আমার মুখ না মুখোশের?


নিজের মুখ ও মুখোশ ব্লার হয়ে

গেলে কি আর 

মুখ আঁকা যায় কিংবা মুখোশ?

Comments

  1. অসাধারণ কবিতাগুচ্ছ

    ReplyDelete
  2. তোমার কবিতা মনে দাগ কাটে। যে দাগ 'ব্লার' হয়ে উল্টো রথে চড়ে না।

    ReplyDelete
  3. সবকটাই পড়েছি। দারুণ লিখেছেন স্যার। আমিও কসকো সাবান পেয়েছিলাম কিন্তু পরে কী করেছি তা মনে নেই আজ। কৃতার্থ

    ReplyDelete
  4. কভার পেজের অংশটা বাইবেলের । প্রচ্ছদের ছবিটা অনন্য সাধারণ আর ভেতরের কবিতায় রসে গন্ধে ভরপুর। আহ্ ..... । অন্তহীন শুভেচ্ছা প্রিয় কবি ।

    ReplyDelete
  5. প্রত্যেকটা অসম্ভব রকম সুন্দর হয়েছে ! শুভকামনা, বন্ধু ।

    ReplyDelete

Post a Comment