অষ্টম শতাব্দীর চীনা কবি লি পো-র লেখা ‘The River Merchant’s Wife: A
Letter’। নব পরিণীতা বধুকে ঘরে রেখে একজন নাবিক নদীপথ ধরে দূর দেশে চলে যায়, আর ফিরে আসে না। শূন্য ঘরে বসে সেই বিরহিনী বধুর অবুঝ প্রতীক্ষা বড় করুণ হয়ে বেজে উঠেছে এই কবিতায়। এজরা পাউণ্ড চীনা ভাষা থেকে এটি অনুবাদ করেন ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে। রবীন্দ্রনাথ এজরা পাউণ্ড থেকে এটি অনুবাদ করেন ১৯৩২ সালে। লি পো-র এই কবিতার ভাবানুসরণে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে অসমীয়া কবি হেম বরুয়া লেখেন - ‘মমতার চিঠি’। এর বঙ্গানুবাদ করেছেন অলোক সাহা। অনুবাদে, অসমীয়া ‘রিহা’ শব্দটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সনাতন অসমীয়া স্ত্রীলোকেরা মেখলা চাদরের নীচে আরেকটি লম্বা চাদরের মতো কাপড় অন্তর্বাস হিসেবে ব্যবহার করেন। এর দৃঢ় বাঁধনটি থাকে কোমরে। বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এটি পরিধান করা একটি চিরাচরিত অসমীয়া রীতি।
![]() |
লি পো |
![]() |
হেম বরুয়া |
মমতার চিঠি
হেম বরুয়া
তোমাকে চিঠি লিখব বলে
একটা মোম জ্বেলে নিয়ে বসেছি আজ অনেক দিনের পরে,
বাইরের দুরন্ত বাতাস ঝাপটা মেরে মোমটাকে নিভিয়ে ফেলতে চাইছে,
দাঁড়াও, জানালাটা বন্ধ করে দিই।
সাত বছর আগের কথাগুলো কি তোমার আর মনে আছে ?
আমরা যে নতুন জীবনটার সূচনা করেছিলাম
তার অচেনা নেশা আমার শরীর জুড়ে মাতন লাগিয়েছিল,
সেদিন ছিল কার্তিকের শিশিরভেজা নরম ভোর
উঠোনে উপচে পড়েছিল ঝরা শেফালিরা
আর, সেই সন্ধ্যাবেলা, আমি নববধূটি হয়ে
তোমাদের বাড়িতে প্রথমবার আসবার দিন
সুদূর আকাশে মেঘের মোহানায়
হলুদ চাঁদ যেন তরিখানি নিয়ে ডাকছিল
আমাদের তারার দেশে নিয়ে যাবে বলে
আমার কোমরে বাঁধা রিহা খানির দিকে
তুমি বাপু ওরকম করে কেন একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলে !
আমার তখন কেমন লাগছিল জানো ?
তুমি যেন কোন দূর বিদেশের
স্বপ্নাতুর আলোর মানুষ,
আর আমি ?
আমি যেন ঝরে পড়া একমুঠো শেফালি।
সেদিন আমার মন সাগরে অনেক ঢেউ
অতীত আর বর্তমানের অনেক ঢেউয়ের কাঁপন জেগেছিল
তোমার বুঝি এই কথাগুলি কিছু মনে নেই ?
আমার বাবা যে চিঠি লিখেছিল,
‘মা, নতুন সংসারে সবাইকে নিয়ে হেসে খেলে থাকবি’...
সে সব সাত বছর আগের কথা ;
সে সবই আজ পৌরাণিক গল্পের মতো মনে হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাসে বাবার বাৎসরিক শ্রাদ্ধ হল।
তোমার বাবুল এখন বড়টি হয়েছে,
ওর ওপরের পাটিতে ছোট্ট ডালিম দানার মতো
একটা দাঁত উঠেছে। ও আমাকে এক মুহূর্তও ছাড়তে চায় না।
(মাঝে মাঝে আমার এমন রাগ হয় ...
তুমি কেন আমার কাছে নেই)
কিন্তু, সে বাপু, আমার সাদা থানের দিকে এমন ভাবে
স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকে কেন ?
তার জন্মের পর থেকেই তো এই সাজ সে দেখে আসছে,
সেই কারণেই হবে হয়তো, তাই না ?
বাবুল এখন বড়টি হয়েছে, বুঝেছ !
(আর একটু বড় হলে ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেব
সে দূরে থাকার সময়টুকু আমার বুকটা যে
তেমনি শূন্য হয়ে থাকবে গো )
আর কী লিখবো, লেখার বিশেষ কিছু নেই।
আমার শপথ রইলো, তুমি যেদিন ফিরে আসবে,
আমাকে কিন্তু আগেভাগেই জানিও, আমি ভোগদৈ নদী দিয়ে ভাটির দিকে গিয়ে
তোমাকে চিৎকার করে ডাকবো, ব্রহ্মপুত্রের বুকের থেকে নিয়ে আসবো তোমাকে,
তুমি যেদিন ফিরে আসবে
আমাকে আগে থেকেই জানাবে কিন্তু, ভুলো না যেন।
একটা মোম জ্বেলে নিয়ে বসেছি আজ অনেক দিনের পরে,
বাইরের দুরন্ত বাতাস ঝাপটা মেরে মোমটাকে নিভিয়ে ফেলতে চাইছে,
দাঁড়াও, জানালাটা বন্ধ করে দিই।
আমরা যে নতুন জীবনটার সূচনা করেছিলাম
তার অচেনা নেশা আমার শরীর জুড়ে মাতন লাগিয়েছিল,
সেদিন ছিল কার্তিকের শিশিরভেজা নরম ভোর
উঠোনে উপচে পড়েছিল ঝরা শেফালিরা
তোমাদের বাড়িতে প্রথমবার আসবার দিন
সুদূর আকাশে মেঘের মোহানায়
হলুদ চাঁদ যেন তরিখানি নিয়ে ডাকছিল
আমাদের তারার দেশে নিয়ে যাবে বলে
তুমি বাপু ওরকম করে কেন একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলে !
আমার তখন কেমন লাগছিল জানো ?
তুমি যেন কোন দূর বিদেশের
স্বপ্নাতুর আলোর মানুষ,
আর আমি ?
আমি যেন ঝরে পড়া একমুঠো শেফালি।
সেদিন আমার মন সাগরে অনেক ঢেউ
অতীত আর বর্তমানের অনেক ঢেউয়ের কাঁপন জেগেছিল
তোমার বুঝি এই কথাগুলি কিছু মনে নেই ?
‘মা, নতুন সংসারে সবাইকে নিয়ে হেসে খেলে থাকবি’...
সে সব সাত বছর আগের কথা ;
সে সবই আজ পৌরাণিক গল্পের মতো মনে হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাসে বাবার বাৎসরিক শ্রাদ্ধ হল।
ওর ওপরের পাটিতে ছোট্ট ডালিম দানার মতো
একটা দাঁত উঠেছে। ও আমাকে এক মুহূর্তও ছাড়তে চায় না।
(মাঝে মাঝে আমার এমন রাগ হয় ...
তুমি কেন আমার কাছে নেই)
স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকে কেন ?
তার জন্মের পর থেকেই তো এই সাজ সে দেখে আসছে,
সেই কারণেই হবে হয়তো, তাই না ?
(আর একটু বড় হলে ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেব
সে দূরে থাকার সময়টুকু আমার বুকটা যে
তেমনি শূন্য হয়ে থাকবে গো )
আমার শপথ রইলো, তুমি যেদিন ফিরে আসবে,
আমাকে কিন্তু আগেভাগেই জানিও, আমি ভোগদৈ নদী দিয়ে ভাটির দিকে গিয়ে
তোমাকে চিৎকার করে ডাকবো, ব্রহ্মপুত্রের বুকের থেকে নিয়ে আসবো তোমাকে,
তুমি যেদিন ফিরে আসবে
আমাকে আগে থেকেই জানাবে কিন্তু, ভুলো না যেন।
ভালবাসা নিও।
ইতি,
তোমার মমতা
পুনঃ জানো, মাঘ বিহুর খড়ের গাদার আগুনটা টকটকে লাল হয়ে জ্বলছিলো। আমাদের ঠাকুমার কালো ছাগলটার দুটো বাচ্চা হয়েছে, একটা শুদ্ধ শাদা, অন্যটা রাঙা।
বেশ তো ? Digital Magazine ?
ReplyDeleteDigital Magazine.
Deleteবাহ! মূল কবিতাটা তো মনছোঁয়া বটেই, তোমার অনুবাদও ভাল হয়েছে। আমার শুভেচ্ছা জেনো। প্রতিভাদি।
ReplyDeleteদিদি, তোমার কমেন্ট পেয়ে ভালো লাগলো
Deleteসুন্দর লাগলো
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteমন ছুঁয়ে গেল। খুব সুন্দর দাদা। মূল কবিতাটি আমি পড়িনি।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। মূল কবিতাটি 'মমতার চিঠি' লিখে গুগল এ খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্ত সেটি অসমীয়া ভাষায় আছে।
ReplyDeleteবর্তমান কবিতাটির শেষের দিকে, যেখানে পুন: দিয়ে শুরু হচ্ছে, সেখানে একটি শব্দ বাদ গেছে। কম্পোজের ভুল।
ReplyDeleteসঠিক লাইনটি হবে: "পুন: জানো, এবারের মাঘ বিহুর খড়ের গাদার আগুনটা ..."
খুউব সুন্দৰ হৈছে, মনত দোলা দি গ'ল
ReplyDeleteঅনুবাদে সমৃদ্ধ
ReplyDelete