গদ্য - স্মৃতিজিৎ

 

আমার অভিসার 


মাঝে মাঝে একা হতে ভালো লাগে। তখন হৃদয়জুড়ে স্মৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ রতি। এই সময়  অবাঞ্ছিত শব্দে বিরক্তি আসে। যদিও কোনো শব্দের প্রতিই আজকাল আর বিশেষ দুর্বলতা নেই। কিন্তু কাউকে অপাঙক্তেয় ভাবতে পারি না। যেকোনো শব্দের ভেতর আমি ডুবে যেতে পারি। কিংবা জলশুশুকের মতো শুঁকে নিতে পারি আকাশের ঘ্রাণ। নারী কিংবা নাড়ি – শব্দের ভেতর সমোচ্চারিত  ব্যঞ্জন বর্ণকে বিশেষ আলাদা ভাবিনা। আকাশের মত হতে চেয়েও সমুদ্রের মত উচ্ছ্বাস। তবু মাঝে মাঝে একা হই। নিজের সাথে কথা বলাও এক অভিসার …  নিজের আত্মার কাছে আরতি সাজাই।‌ সত্তার কাছে নতজানু হই বারবার। 


আমার বহু জন্ম হয়েছে। আরও বহুজন্মের প্রতীক্ষায় রয়েছি। প্রতিদিন কোটি কোশের মৃত্যু হয় জন্ম হয়। এই মৃত্যু ও জন্মের ভেতর দিয়ে সত্তার হয়তো খুব ধীর বিবর্তন ঘটে। কিন্তু তারচেয়েও বিবর্তন ঘটায় আমার পরিপার্শ্ব – আমার চারপাশ।  আমার স্বজনপরজন। আমার প্রেম অপ্রেম। অবজ্ঞা অবহেলা উপেক্ষা। দহন আত্মক্ষরণ। সবকিছুর এক সমুদ্র-মন্থন চলছে। উঠে আসছে গরল, লক্ষ্মী আর অমৃতও। 


আমি আসলে একটা বৃক্ষমানব। দেহকাণ্ড, শাখাপ্রশাখা আমার দুঃখ, কষ্ট আর ক্লেষ। আর গুটিকয় ফল আমার সাফল্য। আমার সুখ। আসলে এ জীবন এক তপস্যা – দুঃখের তপস্যা।

তাই তপস্যার ফলের জন্য অপেক্ষা করিনা। তপস্যার কষ্টের ভেতর আগুনের ফুল খুঁজি। হাপরের হাওয়ায় অক্সিজেন। উত্তপ্ত লাল কয়লার ভেতর জীবনের রং। 


জীবন একটা জার্নি।  দেহটা যান। চোখদুটো স্বচ্ছ কাঁচের জানালা। বাকি পঞ্চেন্দ্রীয় সংগ্রহ করে যাচ্ছে আমার অনুভবের কথামালা! আমার প্রতিটি পদক্ষেপ একটা অভিসার রচনা করে। আমার ভেতর বাস করে জীব গোঁসাই, রূপ গোঁসাই। চণ্ডীদাস।  “রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, গুণে মন ভোর, / প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর!”

Comments