গুচ্ছ কবিতা - দেবাশিস দাশ

 

মনসুর কবিতাগুচ্ছ


. লার্ভা

 

কীভাবে কোথায় গিয়ে জাগরণ খুঁজে পাবে চোখ

প্রাচীন ঝোরার মতো খলবলিয়ে নেমে যাচ্ছি বেঁকে।

অতল ঘুমের মধ্যে তুমি একটা লার্ভা হয়ে গোটাচ্ছ নিজেকে।

তোমার জীবনধর্ম একাকিত্বে গড়ে-তোলা শ্লোক।

 

 

. সাধন-গায়কী

 

কত সহজিয়া সুর তুমি যে কঠিন করে গাও, মনসুর

শহর পাচার করো, মফস্বল উজিয়ে বেড়াও। 

গঙ্গোত্রী দুলিয়ে ফেরো আমার মনের আঙিনায়।

নেচে-নেচে পাক খাও, নকল-নবিশি 'রে সাধন-জ্যোৎস্নায় 

কীভাবে শব্দের তারে লয়খানি করো সংযোজন?—

সে শুধু তুমিই জানো, আমার অবরোহী মন!

 

 

. সময়

 

তোমার শরীর জুড়ে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে সময় নামের নদী। তোমার কপালে দগ্ধ সৌরবৃত্তচাপ। কখন গ্রহের পায়ে-পায়ে উঠে দাঁড়াবে উজালা? কখন ভেতর থেকে ধাক্কারেখাগুলো ঠিকরে এসে আছড়ে পড়বে যৌবনের মুখে? তুমি সেই অপেক্ষার কাঁড়ার, মনসুর।

 

 

. জন্তু

 

আমার ব্রোঞ্জের হাড়ে তোমার কামড়,

রবার-শিরায় রক্তে অলীক ঘোড়দৌড়... 

আমি আজ নাগরিক টার্মিনাসে পাতালপ্রহরে 

নতুন দিনের স্নায়ুস্রোত হয়ে জেগে উঠব কি

 

 

ঘা-খাওয়া বুকের গর্তে 

তুমি একটা জন্তু হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছ। 

তোমার নিঃশ্বাস আর ধ্বক্-ধ্বক্ বাঁচার ধ্বনিতে 

আমার প্রত্যেকটা রোম স্নিগ্ধ হয়ে আছে।

 

 

. বন্য প্রকৃতি

 

সহজ ভূতল ছুঁয়ে আছে ভাঙা আধখানা রোদ।

কালো পাথরের শরীরে সবুজ বনজ চামড়া,

এখানে কোথায় শুয়ে আছ তুমি, প্রিয় মনসুর?

তেজহীন ঘন নম্র গেরুয়া ছায়ালি দুপুর।

 

 

শীর্ণ নদীর পাশে চালাঘর, ধারালো স্রোতের 

দাঁত চেপে আছে উজ্জ্বল কালো পাথুরে মহিষ।

এখানে মেশেনি প্রকৃতির মনে পাতকের বিষ।

বুনো চরিত্র পাল্টাতে কোনও নগুরে আসেনি।

 

 

পাহাড়ের নীচে অলীক রাস্তা পেতেছ, সুদূর...

এখানে কোথায় শুয়ে আছ তুমি, ওহে মনসুর?

 

 

. মননপুর

 

একদিকে ইট পাঁজা-করে রাখা,

অন্যপ্রান্তে প্রান্তর আঁকা

মননপুরের মাঠে বসে আছে ছোট পরিবার।

ছোট্ট মেয়েটা ক্ষয়াটে মাথায় চুল বেছে দেয় কৃষক বাবার।

 

 

বাসন ছড়িয়ে মা খাবার বাড়ে

ধানজমি জুড়ে হাওয়ার জোয়ারে

কাদের জন্য ছড়ানো খাবার?... কাদের জন্য?

মনসুর লেখেমুঠোভরা রোজগারের অন্ন।

Comments

  1. 'মুঠোভরা রোজগারের অন্ন' –
    ভাস্বর হয়ে ওঠে জীবনের পুষ্পিত প্রাঙ্গণে
    হৃদয়ের মায়াময় কবিতায়... 🌹

    ReplyDelete

Post a Comment