গল্প- নবনীতা সান‍্যাল


গিল্টি


লকডাউন উঠে গেলে ঝর্ণা  ফিরে এলো। ঘরে থেকে  একটু  রোগা  রোগা  হয়ে   গেছে  ঠিকই, কিন্তু বেশ ঝকঝকে লাগছে।হাতেএকগোছা সবুজ চুড়ি।  ঝনকঝনক বাজছে।  বর্ষা এবার আগেই  শুরু  হলো। চিকণ হাতে সবুজ রঙ বড্ড ঝলমল করে। শ‍্যামলা  মেয়েটা  কাজে  ঢুকে যেন  উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।  ব‍্যাপারটা চোখে পড়েছে ঝিমলির   শাশুড়িরও। 'কি ব‍্যাপার রে?   কোথায় ছিলি  রে এতদিন ?"  কী যে বলো কাকিমা!কোথায় থাকবো আবার?' এবার থেকে ঠিকঠাক পৌঁছা য়  যাবো  দেইখো নি!"''কেন,রে? পক্ষীরাজ ঘোড়া  পেলি   নাকি লকডাউনে?' এবার ঝিমলিই কথা বলে।মাত্রই একবছর বিয়ের বয়স  ঝিমলি আর অভীকের। তার মধ্যে লকডাউনেই নষ্ট হলো বেশ কিছু সময়।নষ্ট?  না,না সবটাই কী নষ্ট হলো,বলা চলে?!সবটাই হারানো না ,,অনেক পাওয়াও তো হলো।লকডাউন ফিরিয়ে দিল সমুদের মতো অনেক সম্পদও।অল্প হলেও চেনাজানা হলো অভীক আর ঝিমলির।ম‍্যাট্রিমণি সাইট সূত্রে পরিচয়--,কে কতটুকু কাকে চেনে আর!!কাজের সূত্রে অভীক যে ব‍্যাঙ্গালোর চলে যাবে,আর ঝিমলি চাকরির  জন্যই থেকে যাবে পুরোনো শহরে,সেটুকু জানাই ছিল।লকডাউন  ঘোষণার প্রাথমিক পর্ব কাটিয়ে  শুরু হলো 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম'। ঝিমলি,অভীক দুজনেরই। আর,তাই ঝিমলিও থেকে গেল অভীকদের বাড়ি,যেটাকে  আস্তে আস্তে নিজের বলে মনে করতে লাগলো।


বিয়ের পরে ঝিমলি দেখেছে ঝর্ণা আসতো সাইকেল নিয়ে। তারপর মাঝে মাঝেই ওর অবশ‍্য দেরি হচ্ছিল বেশ--কারণ,ও  প্রায়ই গাড়ি পায় না!!। এর মধ্যেই  লকডাউন..আর সে পর্ব সেরে ঝর্ণার ফিরে আসা--'এখন আর দেরি হবে না,দেইখো"। খেতে বসে ঝর্ণা  বললো। 'তোমার মেয়ে ভালো আছে ঝর্ণা?'"ঝিমলিও টুকটাক কথা বলে।' হূ, 'বলে, ঝর্ণা  খাওয়াতে মন দেয়। ''মেয়ের কথায় কেমন গা ছাড়া ভাব দেখলি তো!" বিকেলে চা খেতে গিয়ে কথাটা  তোলেন অভীকের মা  সুজলাদেবী।  ঠিকে কাজের  দিদি  তার আগেই  সাতকাহন  গেয়ে গেছে।  কোন্ এক টোটোওয়ালার  চক্করে  পড়েছে নাকি ঝর্ণা!!  দশবছরের  মেয়েকে  রেখে  টো টো  কোম্পানি করছে তার সঙ্গে। "তাই এতো ফূর্তি!!!  রসের বলিহারি! "গজগজ করেন সুজলাদেবী। ঝিমলি কিছু না বলে মুখ  টিপে  একটু হাসে।

সময়  গড়ায়। এক লকডাউন গিয়ে খেপে খেপে  আরও  লকডাউন আসে।এবারঅভীক ফিরে যায়।  ঝিমলির  মন বসেনা।  মাঝে  মাঝেই চাকরি  ছেড়ে অভীকের সঙ্গে থেকে  সংসার করার কথা ভাবে ও।এরমধ‍্যেই,ঝর্ণা  ছুটি নিয়ে বিয়ে করে টোটোওয়ালা  শ‍্যামলকে। সুজলাদেবী  বিরক্ত হন। কিন্তু, ঝর্ণাকে  একেবারে বাদ দিতেও পারেন  না। দিনদশেক বাদে আবার বহাল হয় ঝর্ণা। এরমধ্যেই  ঝিমলির  ব‍্যাঙ্গালোর যাওয়া ঠিক  হয়।


  ফিরে এসে ঝিমলি বোঝে  তারা বড্ড মিসম‍্যাচ। বড্ড মুডি আর অ‍্যাম্বিশাস  অভীক,-- সেণ্টিমেণ্টাল  ঝিমলিকে  তেমন  আমলই সে দেয়  না। কতো ফারাক  তাদের  চাহিদা  আর যাপনে! ঠিক কী  ভাবা উচিত  ঝিমলি বুঝে উঠতে পারে না। এর মধ্যে  শুকনো  মুখে ঝর্ণা ঝিমলির ঘরে এসে বসে। বলে, ঠকে  গেলাম  বউরাণী। শ‍্যামলের বউ আছে গেরামে। আগে জানলে  হারামিটারে  আমি সবক শিখায়ে...!!" মিতবাক  ঝিমলি  একটু  শিউরে  ওঠে। ঝর্ণা  আবার বলে  ""দুইমাস  মাসিক হয় নাই, ভয় লাগতেছে বউরাণী!!"

ঝর্ণার  মুখের  দিকে  তাকিয়ে একটা  সম্ভাবনা  চলকে চলেক ওঠে  ঝিমলির।  বিশ্বাস দোল  খেতে  থাকে।  ঝর্ণার  হাতের সোনালি  বাহারি চুড়িগুলি রঙ উঠে গিয়ে ভারি  কুৎসিত দেখায় --


  বৃষ্টি থেমে  গেছে অনেকক্ষণ। থম  ধরা মুখভার  বিকেলে আধাআলোয়, জানলার  শার্সিতে এসে  মাথা কুটে মরছে বোকা বাদলাপোকার দল!



      

Comments

  1. অল্প আঁচড়ে চমতকার আঁকা গেছে ছবি💚

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো নবনীতা দি।

    ReplyDelete

Post a Comment